শক্তি পীঠ – বক্রেশ্বর

30

শক্তি পীঠ – বক্রেশ্বর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ শক্তিপীঠ বক্রেশ্বর নিয়ে লিখবো।

পীঠমালা, কালিকাপুরাণ ও তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে বক্রেশ্বরের উল্লেখ আছে।

 

এই শক্তিপীঠে সতীর ভ্রুসন্ধি বা মনঃস্থান পড়েছিল বলে, ভারতবর্ষের একান্ন পীঠের মধ্যে বক্রেশ্বরকে মহাপীঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। তন্ত্রের ভাষায় ওই মনঃস্থানকে আজ্ঞাচক্র বলে।বক্রেশ্বরে দেবীর ভৈরব হলেন বক্রনাথ এবং দেবী এখানে মহিষ মর্দিনী রূপে পূজিতা হন।

 

বক্রেশ্বরের সঙ্গে জড়িয়ে ঋষি অষ্টাবক্রের কাহিনি। কথিত আছে, অষ্টাবক্র মুনি প্রথমে কাশীতে উপাসনার সংকল্প নেন। কিন্তু কাশীর বিশ্বনাথ স্বয়ং তাঁকে গৌড়দেশের গুপ্তকাশী বক্রেশ্বরে গিয়ে সাধনা করতে বলেন।

 

আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে বক্রেশ্বর ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা নির্জন ভূমি। চৈতন্য ভাগবতে তার প্রমাণ মেলে। কাটোয়ায় সন্ন্যাস গ্রহণের পর মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য বলেছিলেন, ‘বক্রেশ্বর আছেন যে বনে, তথায় যাইনু মুঁঞ্চি থাকিমু নির্জনে।’ সেই সময়টায় তান্ত্রিক, ভৈরবী, অঘোরপন্থীদের দাপট ছিল বক্রেশ্বরে।

 

পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক তথ্যের নিরিখে আজকের বক্রনাথের মন্দির সাতশো বছরের বেশি পুরনো। নির্মাণ করিয়েছিলেন রাজা নরসিংহ দেব। বাংলায় সুলতানি শাসনে মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর রাজা দর্পনারায়ণ সতেরোশো একষট্টি খ্রিস্টাব্দে তা সংস্কার করেন।

 

মহাপীঠ বক্রেশ্বরকে বেষ্টন করে রয়েছে সাতটি উষ্ণ প্রস্রবণ এবং একটি শীতল জলের কুণ্ড। মাটির নিচ থেকে জলের নিরন্তর বিচ্ছুরণ হয়ে চলেছে অলৌকিক ভাবে যা এখানে আসা পর্যটক এবং তীর্থ যাত্রীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।

 

বক্রনাথের মন্দিরে ভগবানের চেয়েও উচ্চাসনে রয়েছেন তাঁর ভক্ত। গর্ভৃগৃহে পিতলের ধাতু মণ্ডিত উঁচু যে শিলা রয়েছে তা অষ্টাবক্র মুনির। এর ঠিক পাশেই কিছুটা নিচে বক্রেশ্বর মহাদেবের ছোট শিলা।

 

দেবীমন্দিরে বেদীর ওপরে ভ্রুসন্ধির প্রস্তুরীভূত রূপটি রক্ষিত আছে। জনশ্রুতি আছে যে খাকি খাকিবাবা নামে খ্যাত এক সিদ্ধ সন্ন্যাসী শাস্ত্র মতে বহু যুগ আগে বেদীতে এটির প্রতিষ্ঠা করেন।

 

প্রায় প্রত্যেক অমাবস্যায় এই বক্রেশ্বর পীঠে অসংখ্য দর্শণার্থী আসেন। তন্ত্র মতে পুজো এবং হোম যজ্ঞ হয়।

 

পরবর্তী শক্তিপীঠ নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।