কালী কথা – চাঁদুনি কালী 

6

কালী কথা – চাঁদুনি কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নদিয়ার শান্তিপুর স্টেশন থেকেব প্রায় দু কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এক প্রাচীন কালী মন্দির যেখানে মা কালীকে চাঁদুনি কালী বলা হয়।এবং এই মন্দিরে পুজোর ক্ষেত্রে মহিলারাই প্রধান ভূমিকায় থাকেন|কেনো এই নাম এবং কেনো মহিলা দের এতো বেশি গুরুত্ব তার সাথেও জড়িত আছে এক কিংবদন্তী|সেই সব নিয়ে লিখবো আজকের পর্বে।

 

বহুকাল আগে নদিয়ার শান্তিপুর ছিল বর্ধিষ্ণু জনপদ৷ তখন শান্তিপুর দিয়ে প্রবাহিত হত মা গঙ্গা৷ আর সেই গঙ্গার পাড়ে একটি কুটিরে বাস করতেন সাত্ত্বিক গোপীনাথ সার্বভৌম যিনি ছিলেন

মহা প্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের শিক্ষা গুরু।চৈতন্য মহাপ্রভুর গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি।

 

কথিত আছে এক রাতে গোপীনাথ মায়ের স্বপ্নাদেশ পান৷ স্বপ্নাদেশে তিনি জানতে পারেন মা সিদ্ধেশ্বরীরা প্রতিমা নির্মাণ করতে হবে তাঁরই পত্নীকে৷ মায়ের নির্দেশে বাড়ির পঞ্চমুণ্ডির আসনে গোপীনাথ প্রতিষ্ঠা করেন মা চাঁদুনিকে৷

 

মায়ের এহেন নাম নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে৷ কারও মতে চাঁদুনি নামটি এসেছে চাঁদনি থেকে৷ চাঁদনি মানে জ্যোৎস্না৷মনে করা হয় পূর্ণিমার রাতে মায়ের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল সেই তিথি অনুসারে অর্থাৎ চন্দ্রালোকিত রাত্রির নামানুসারে দেবীর নাম ‘চাঁদুনি’ রাখা হয়।

 

সার্বভৌমর পরিবারের লোকেরাই বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন মা সিদ্বেশ্বরীরা| এখানে দুর্গাপুজোর শেষে দুর্গা দেউলেই শুরু হয় মায়ের কাঠামো গড়া৷ পারিবারিক রীতি অনুযায়ী আজও বংশের বড় বউ কাঠামোতে প্রথম মাটি দিয়ে এর শুভারম্ভ করেন এবং মায়ের কেশসজ্জা বাড়ির ছেলেরা জবাকুসুম তেল দিয়ে করে থাকেন। এই রীতি এখানে সেই শুরুর দিন থেকে চলে আসছে।

 

প্রতি অমাবস্যায় মায়ের কাঠামো শক্তিরূপে পুজো করা হয়৷ কালীপুজোর দিন মা চাঁদুনিকে দুর্গাদেউল থেকে বাতাস করতে করতে কালীমন্দিরে আনা হয়৷ দেবীর পুজো হয় নিষ্ঠা ও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে যদিও একসময় এখানে মোষবলি হত৷ এখন তা না হলেও পাঁঠাবলি হয়|

 

আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা। ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।