জয় জগন্নাথ – নীলমাধব রহস্য

64

জয় জগন্নাথ – নীলমাধব রহস্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভগবান নীলমাধব হলেন ভগবান বিষ্ণুরই অন্যতম রূপ। পুরীতেই ইনি ভগবান জগন্নাথ হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। ওড়িশা রাজ্যের প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, পুরীতে জগন্নাথদেবের পুজোর আগে থেকেই ভগবান বিষ্ণুর রূপ হিসেবে নীলমাধবের পুজো করা হত।আজকের পর্বে এই নীলমাধব রহস্য নিয়ে লিখবো।

 

বিষ্ণুসহস্র নামে উল্লেখ রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর চব্বিশ টি প্রধাননামগুলির মধ্যে অন্যতম হল নীলমাধব।

 

জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়ার আগেই চারটি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই নীলমাধবের পুজোর স্থান । শাস্ত্র মতে ভগবান বিষ্ণু প্রথমে নীলমাধবের আকারে কাঠের মূর্তি রূপে ওড়িশার কন্টিলোতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অর্থাৎ পুরীর মন্দিরের আগে থেকেই কন্টিলোতে চলে আসছে পুজো।

 

পরবর্তীতে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু ওড়িশার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে একদিন স্বপ্নে দেখা দেন এবং জানান, ওড়িশার মহানদীর তীরে তিনি নীলমাধব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। যেখানে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন সেখানে শবর জনগোষ্ঠীর প্রধান তাঁকে একটি বড় গাছের নিচে পুজো করছে। এই স্বপ্ন দেখার পরের দিনই ইন্দ্রদ্যুম্ন, তাঁর বিশ্বস্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিত বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের মূর্তি খুঁজে বের পুরীতে আনার নির্দেশ দেন।

 

নীলমাধবের খোঁজে গিয়ে সবর জনজাতি গোষ্ঠীর প্রধান বিশ্ববসুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। বিশ্ববসুর কাছে পুরীর রাজার সন্ধির প্রস্তাব দেন।এই সময় বিদ্যাপতি বিশ্ববসুর কন্যা ললিতার প্রেমে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। এরপর একদিন বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের দর্শন করান বিশ্ববসু। পরবর্তীকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে ফিরে গিয়ে বিদ্যাপতি জানান যে, নীলমাধবকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন। পরবর্তীকালে নিজের দলবল নিয়ে বনের মধ্যে গিয়ে পড়েন কিন্তু নীলমাধব তাকে দর্শন দেননি।

 

নিজ রাজ প্রাসাদে ফিরে ইন্দ্রদ্যুম্ন শুরু করেন কঠোর তপস্যা। অন্ন-জল কোনও কিছু গ্রহণ করেননি। সারাক্ষণ নীল মাধবের দেখা পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ধ্যান করতে লাগলেন। অবশেষে বিষ্ণু প্রকট হন রাজার সামনে। তাঁকে জানান যে, পুরীর সমুদ্র সৈকতে তিনি দারু ব্রহ্মা রূপে আবির্ভূত হবেন রাজা পুরীতে বিশাল মন্দির নির্মাণ করে সেই দারু ব্রহ্ম দিয়ে তার মূর্তি নির্মাণ করে যেনো তাকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পুজো শুরু করেন।

 

পরবর্তী ইতিহাস হয়তো আমরা অনেকেই জানি। সে কথা আমি আগেও অনেক বার বলেছি। নীলমাধব আজও পুরী ধামে জগন্নাথ রূপে বিরাজমান।ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে জগন্নাথ সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।