চড়ক এবং গাজন উৎসবের ইতিহাস
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
চৈত্র মাস হল শিব পার্বতীর বমাস। এই মাসেই তাই গাজনের ধুম। এই গাজনের মাধ্যমে শিব ভক্তরা তাদের আরাধ্য মহাদেব কে এবং দেবী পার্বতীকে স্মরণ করেন।গাজনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান চড়ক যা এই উৎসবেরই একটি অঙ্গ।আজকের পর্ব চড়ক এবং গাজন নিয়ে।
বাঙালির নব বর্ষের সূচনা হয় গাজন এবং চড়ক উৎসবের মধ্যে দিয়ে। এই গাজন এবং চড়ক দুটি বেশ প্রাচিন কাল থেকেই বঙ্গদেশে প্রচলিত। শিব পার্বতী ছাড়াও বহু লৌকিক দেব দেবী এই উৎসবে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
কেউ বলেন গর্জন থেকে গাজন, কেউ বলেন ‘গাঁয়ের জন’-এর উৎসব থেকে গাজন।প্রকৃত অর্থ যাই হোক দুটি অর্থই বেশ মানানসই।কারন এককালে ঢাকের বাদ্যি, ভোলা মহেশ্বরের নামে সন্ন্যাসীদের গর্জন ও গাজনগীতিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠতো বাঙালি মেতে ওঠে গাজন উৎসবে। বর্তমান সময়ে গ্রামেই গাজন গানের উৎসব পালন হয়।বহু গ্রামাঞ্চলে আজও বৈশাখী আমেজ মানেই গাজন এবং চড়ক উৎসব।
তবে কলকাতার বাবু সমাজেও চড়ক বেশ জনপ্রিয় ছিলো এক সময়ে।
এককালে কলকাতার বাবুরা ঘটা করে চড়ক উৎসব পালন করতো।বাগবাজারের এই চড়ক ছিল কলকাতার বিখ্যাত ও সর্বপ্রধান চড়ক। চড়ক গাছের সঙ্গে উপর উপর চারটি মাচান বেঁধে তার মাঝখানে এক জন করে মহাদেব সাজিয়ে চার কোণে চার জন করে মোট ষোলো জনকে পিঠ ফুঁড়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হত।
এই উৎসবে মুখোশ নাচও হতো কোথাও কোথাও।সন্ন্যাসীদের কঠিন সাধনার মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হতো।বিশেষ করে উত্তর বঙ্গে গম্ভীরা রূপে পালন হতো এই উৎসব।
পরবর্তীতে শারীরিক নৃশংসতার কারণে কোথাও কোথাও গাজনের কিছু উপাচার নিষিদ্ধ হয়। তবে এই চৈত্র উৎসবে সন্ন্যাসীদের নিষ্ঠা এবং
ভক্তি আজও অটুট আছে । বাংলার প্রায় প্রতিটি শিব মন্দিরে এই সব রীতি নীতি দেখা যায়।
আজও বাংলা জুড়ে গাজন এবং চড়কের মেলা বসে।আনন্দ এবং উৎসাহ আগের মতোই আছে।
আপনাদের সবাইকে জানাই গাজন এবং
চড়ক উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা বাংলা নব
বর্ষ উপলক্ষে একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।