রামনবমীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ রাম নবমী। দীর্ঘ টানা পোড়েন এবং আইনি জটিলতার পরে রাম লালা তার জন্ম ভূমিতে বিরাজমান হয়েছেন। এই মুহূর্তে সারা দেশ জুড়ে শ্রী রাম কে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনা চোখে পড়ছে তবে এতো কিছুর মাঝে শাস্ত্রকে ভুলে গেলে চলবেনা। আজ আপনাদের রাম নবমীরে শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা জানাবো।
শ্রী রাম ছিলেন সূর্য্য বংশীয় রাজা দশরথের অস্বমেধ যোগ্য লব্ধ যেষ্ঠ পুত্র। শৈশব থেকেই তিনি রাজধর্ম পালন করছেন কারন রামের যখন চোদ্দ বছর বয়স তাকে ঋশি বিস্বামিত্র রাক্ষস দের হাত থেকে যজ্ঞ রক্ষা করার জন্য দশরথের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যান। সেই থেকে শুরু হয় তার দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন যা শেষ হয় রাবন বধের মধ্যে দিয়ে।
বিভিন্ন যুগে ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব সংসারের সকল মানুষকে ন্যায়পরায়ণতার ও সত্যের পথ প্রদর্শন করতে মিথ্যার উপর সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা করতে
নানা অবতার রূপে আমাদের ধরিত্রী তে অবতরণ করেন|ত্রেতা যুগে রাম ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রূপে জণ্মেছিলেন।সনাতন ধর্মে যতজন ভগবানের অবতার আছেন তাদের মধ্যে রামকে এক কথায় সর্বশ্রেষ্ঠ বলা যায়।
তিনি ন্যায় এবং সুশাসনের প্রতীক। তার জীবন এবং দর্শন ভারতের আদর্শ। আজ তার তার জন্ম তিথিকেই আমরা রাম নবমী রূপে পালন করি।রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে নিক্ষেপ করে ধর্মকে স্থাপন করা। মন্দ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা করা।ভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও ভগবান রামের উল্লেখ আছে। বিশ্বের বহু দেশেই রামের মন্দির আছে,ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাম মূর্তি|শ্রী রাম সততার প্রতীক, ত্যাগের প্রতীক,অসত্যর উপর সত্যর জয়ের প্রতীক|রাজ ধর্ম পালন করতে তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেনতা এক দৃষ্টান্ত|রাম নামকে বলা হয় কলিযুগের সব অন্ধকারকে দূর করে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অস্ত্র|
শাস্ত্রমতে এই রাম নবমী উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন। সমগ্র দিনজুড়ে ভক্তিমূলক গান গাওয়া বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় বইগুলি থেকে পাঠ করে শোনাবার রীতি আছে| এই দিনটিতে রাম কথার বর্ণনা করে, রাম কাহিনী পড়ে সহজেই বিষ্ণুর কৃপা লাভ করা যায়, অনেকে মন্দিরে যান, অনেকে বাড়িতে রামের মূর্তিতে পূজা করেন। বহু স্থানে সূর্য দেবকে জল প্রদান করে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয় আজকের দিনে|
এই কলি যুগে রাম নাম মুক্তির পথ। শুধু মাত্র নাম জপের মাধ্যমে অসাধ্য সাধন হতে পারে। পুরানে আছে দস্যু রত্নাকর শুধু রাম নাম জপ করে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ঋষি বাল্মীকিতে রূপান্তরিত হয়ে ছিলেন।
সবাইকে জানাই রাম নবমীর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো আগামী দিনে। শিব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায়। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।