দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মল্লিকার্জুন
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমে রয়েছে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ যা অত্যন্ত জাগ্রত বলেই ভক্তদের বিশ্বাস।আজকের পর্বে এই জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে লিখবো।
শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন মন্দির একই সাথে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ এবং মহাশক্তিপীঠেরও অন্যতম। কথিত আছে, এখানে সতীর ওপরোষ্ঠ পড়েছিল।
তবে আজ শক্তি পীঠ হিসেবে নয় জানবো এই জ্যোতির্লিঙ্গর বিশেষত্ব এবং তাৎপর্য।
এখানের শিবমন্দিরটি পূর্বমুখী। এর মূল মণ্ডপে অনেকগুলো স্তম্ভ রয়েছে এবং নন্দীকেশ্বরের বিরাট মূর্তি রয়েছে।
শ্রীশৈলমের শিবমন্দির তৈরির পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি।যখন শিব এবং পার্বতী তাঁদের দুই ছেলে গণেশ ও কার্তিকের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান করছিলেন। সেই সময় কার্তিক নাকি তর্ক জুড়েছিলেন, কে আগে বিয়ে করবেন, সেই ব্যাপারে। শিব তখন জানিয়েছিলেন, যে আগে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে, তারই আগে বিয়ে হবে। কার্তিক তাঁর বাহন ময়ূরে চেপে বিশ্ব প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়েছিলেন। অপর দিকে বুদ্ধিমান গণেশ শুধু শিব-পার্বতীকেই সাতবার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। শাস্ত্রমতে নিজের মা-বাবাকে প্রদক্ষিণ করলেই বিশ্ব প্রদক্ষিণ হয়ে যায়।গণেশ তাই সেই পথ বেছে নেয়।
পরবর্তীতে বুদ্ধি, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে সম্পন্ন হয় । বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে ফিরে এসে সেসব দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কার্তিক। তিনি কুমার এবং ব্রহ্মচারী হিসেবে থাকার জন্য ক্রৌঞ্চ পর্বতে চলে যান। ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে শিব এবং পার্বতীও সেখানে যান। কিন্তু, কার্তিক ফিরতে রাজি হননি। তখন শিব ও পার্বতী কাছাকাছি এক স্থানে থাকা শুরু করেন। যেখান থেকে শিব প্রতি অমাবস্যা এবং পার্বতী প্রতি পূর্ণিমায় গিয়ে কার্তিককে দেখে আসতেন। যে জায়গায় শিব ও পার্বতী নির্বাচন করেন সেই জায়গাই পরিচিত হয় শ্রীশৈলম নামে।সেই পবিত্র স্থানেই জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে স্বয়ং শিব বিরাজ করছেন।
সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে নিজের মনস্কামনা পূরণের প্রার্থনা জানাতে। তবে, অন্যান্য শিব মন্দিরের মতই শিবচর্তুদর্শী বা শিবরাত্রির দিন এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয়।এই স্থান দর্শন করলে একই সাথে শক্তি পীঠ এবং জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের পুন্য লাভ হয়।
ফিরে আসবো পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ এবং সেই
সংক্রান্ত পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।