দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি

85

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ থেকে ধারাবাহিক ভাবে আপনাদের শোনাবো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা আজকের পর্বে শোনাবো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার পৌরাণিক কাহিনী|

 

কীভাবে সৃষ্টি হল এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের, তার নেপথ্যে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। গল্পটা হল এইরকম। একবার ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর মধ্যে জোর লড়াই বাঁধল। বিষ্ণু বললেন আমি শ্রেষ্ঠ আর ব্রহ্মা বললেন আমি। মীমাংসা করতে দুজনে গেলেন শিবের কাছে। শিব তখন স্বর্গ, মর্ত আর পাতাল ফুঁড়ে দেখা দিলেন এক আদি অনন্ত আগুনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে। তিনি ব্রহ্মা আর বিষ্ণুকে বললেন যে এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের শুরু বা শেষ খুঁজে বের করতে পারবে, প্রমাণ হবে সেই শ্রেষ্ঠ।বিষ্ণু শুয়োর বা বরাহের রূপ ধারণ করে নীচের দিকে যেতে শুরু করলেন। আর ব্রহ্মা একটি হংসের রূপ ধারণ করে উপরের দিকে যেতে লাগলেন।বেশ কিছুটা নিচে যাওয়ার পর বিষ্ণু বুঝতে পারলেন এ শিবের ছলনা বৈ আর কিছু না। এই স্ফুলিঙ্গের তল পাওয়া অসম্ভব। ব্রহ্মাও বেশ কিছুটা উপরে যাওয়ার পর এই সত্য বুঝতে পারলেন। অর্থাৎ আদি শিব লিঙ্গর আদি বা অন্ত নেই তা অনন্ত এবং শাস্বত। তার বিস্তার সমগ্র ব্রম্ভান্ড জুড়ে।

 

শাস্ত্রে আছে এই জ্যোতির্ময় লিঙ্গই মোট ৬৪টি জায়গায় ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। যার মধ্যে ১২টি অত্যন্ত পবিত্র এবং আবিষ্কৃত এই বারোটি স্থানে রয়েছে বারোটি শিব মন্দির এবং এগুলোই হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ।

 

এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি হলো যথাক্রমে

 

১। গুজরাতের সোমনাথ মন্দির:

 

কথায় বলে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের পরিক্রমা শুরু করলে এখান থেকেই করা উচিৎ।

 

২। গুজরাতের নাগেশ্বর:

 

জামনগরে অবস্থিত এই মন্দিরের দেবতা নাগেশ্বরের উল্লেখ আছে শিবপুরাণে।

 

৩। মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর:

 

নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে অবস্থিত এই মন্দির।

 

৪। মধ্যপ্রদেশের মহাকালেশ্বর:

 

প্রাচীন শহর উজ্জয়নীতে অবস্থিত এই মন্দির। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটা একমাত্র লিঙ্গ যার মুখ দক্ষিণ দিকে।

 

৫। মহারাষ্ট্রের ভীমাশঙ্কর:

 

ভীমাশঙ্করের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। কারণ এই নামে উড়িষ্যা, গুয়াহাটি ও উত্তরাখণ্ডেও মন্দির আছে।

 

৬। মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর:

 

গোদাবরী নদীর উৎপত্তির সঙ্গে জড়িত এই মন্দির অবস্থিত নাসিক জেলায়।

 

৭। মহারাষ্ট্রের গৃশ্নেস্বর:

 

এই মন্দিরের উল্লেখ আছে শিব পুরাণে।

 

৮। বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ:

 

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরে অবস্থিত এই মন্দির আছে গঙ্গার পশ্চিম দিকে।

 

৯। ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ:

 

দেওঘরে অবস্থিত এই মন্দির খুব জনপ্রিয়। কথিত আছে শিবভক্ত রাবণের চিকিৎসা করেছিলেন মহাদেব। তিনি হয়েছিলেন বৈদ্য। আর এখান থেকেই বৈদ্যনাথ নামের উৎপত্তি।

 

১০। উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ:

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এটি। একদা ঘটে যাওয়া মহাপ্রলয়ও পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের এখানে যাওয়া থেকে নিরস্ত করতে পারিনি। বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত এবং এটি শিবের বাসস্থান কৈলাস পর্বতের খুব কাছে। কেদারনাথ চারধামের অন্যতম।

 

১১। অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুনস্বামী:

 

কুরনুল জেলার শ্রীশৈলম অঞ্চলে এই মন্দির অবস্থিত। এখানে শিবের সঙ্গে রয়েছে পার্বতীও। বাবা মাকে প্রদক্ষিণ করে গণেশের বিশ্ব ভ্রমণের গল্প জড়িত আছে এই মন্দিরের সঙ্গে।

 

১২। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম:

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত।

 

আগামী পর্ব গুলিতে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি নিয়ে

বিস্তারিত আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।