শিব তীর্থ – নর্তকেশ্বর শিব

79

শিব তীর্থ – নর্তকেশ্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিবের নটরাজ রূপের পুজো বাংলায় খুব একটা হয়না ঠিকই তবে পূর্বভারতে একসময় ‘নর্তকেশ্বর’ নামক নৃত্যরত শিবমূর্তির পূজা প্রচলিত ছিল।আজকের পর্বে আপনাদের এমনই

এক শিবমূর্তির ইতিহাস জানাবো।

 

দশম শতকের শেষভাগে পালবংশের রাজা যখন মহীপাল। তখন বাংলা আক্রমণ করলেন সে যুগের ভারতবর্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা চোলরাজ রাজেন্দ্র।চোলরাজ রাজেন্দ্র ছিলেন শিব ভক্ত ।

তাই তার সেনাবাহিনী সোনাদানা বা মূল্যবান রত্ন ছাড়াও বঙ্গবিজয়ের আরও একটি স্মারক নিয়ে যান নিজের রাজ্যে। সেটি হল, নর্তকেশ্বরের বিগ্রহ।

সেই অদ্ভুত সুন্দর শিব মূর্তি দেখে অত্যান্ত খুশি হন চোল রাজা। তার ইচ্ছায় তামিলনাড়ুর অমৃতঘটেশ্বর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন বাংলার শিবঠাকুর।

 

সেই মূর্তি ছিলো শিবের নৃত্যরত রূপের

যাকে বলা হতো নর্তকেশ্বর শিব।এই নর্তকেশ্বর শিব মূর্তি মূর্তি মূলত দুইপ্রকার। দশভুজ নর্তকেশ্বর এবং দ্বাদশভুজ নর্তকেশ্বর।দুটি মূর্তিই অত্যান্ত দুর্লভ।বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া সেই শিব মূর্তি ছিলো দশভুজ নর্তকেশ্বর।

 

অপূর্ব সেই ধাতব বিগ্রহ বৃষরূপী নন্দীশ্বরের পৃষ্ঠে ললিত তাণ্ডবে মত্ত নর্তকরাজ, তাঁর বাহনটি ঊর্ধ্বমুখ হয়ে দেখছে সেই নৃত্যলীলা। মহেশ্বরের মাথায় জটামুকুট, স্কন্ধে নাগ-উপবীত তাঁর মুখ্য দক্ষিণহস্তে রয়েছে গজহস্ত মুদ্রা, বাম হাত উপরে তুলে পতাকামুদ্রায় তার ভক্তদের অভয় দিচ্ছেন। অন্য আটটি হাতে রয়েছে ধনুর্বাণ, খড়গ-চর্ম, ত্রিশূল, খট্টাঙ্গ, কপালপাত্র আর অঙ্কুশ।

তাঁর পায়ের কাছে, তাঁকে ঘিরে রয়েছেন গণপতি, স্কন্দ এবং অন্যান্য অদ্ভুতদর্শন শিবানুচরের দল। মহাদেবের প্রভামণ্ডলের দক্ষিণাংশে শূন্যে মরালপৃষ্ঠে বিরাজ করছেন বীণাধারিণী সরস্বতী, ঊর্ধ্বভাগে হাতে পুষ্পমালা নিয়ে ভেসে রয়েছেন দুই বিদ্যাধর।

 

এমন ধরণের নর্তকেশ্বর রূপে শিব মূর্তি প্রাচীনকালে বাংলার আরো অনেক স্থানে দেখা যেতো তবে বর্তমান সময়ে এই মূর্তি বাংলায় খুব একটা দেখা যায়না। বাংলার নর্তকেশ্বর শিব মূর্তির একটি বৈশিষ্ট ছিলো দুইপাশে দণ্ডায়মানা দুই দেবী দক্ষিণভাগে মকরবাহিনী গঙ্গা এবং বামভাগে সিংহবাহিনী উমা।এই মূর্তির দর্শন পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের বিষয় কারণ অতি দুর্লভ এই

শিব মূর্তি।

 

বাংলার শিব মূর্তি এবং শিব মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্ব

গুলিতে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।