শিব তীর্থ – নবাবহাটের একশো আটটি শিব মন্দির

45

শিব তীর্থ – নবাবহাটের একশো আটটি শিব মন্দির

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বর্ধমানের নবাবহাটে রয়েছে ১০৮ টি প্রাচীন শিব মন্দির। মন্দির গুলি জপমালার মতো পরপর বসানো ১০৮টি শিব মন্দির, জড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন ইতিহাস এবং কিংবদন্তী। আজকের পর্বে আলোচনা করবো এই একশো আট
শিব মন্দির নিয়ে।

শোনা যায় বর্ধমানের এই নবাব হাট এলাকা নাকি একসময় জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল। কেউ যেত না সেই গ্রামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারীর কারণে এলাকায় ছিল না জনবসতি। প্রজাদের বাঁচাতে
এবং মনের ভয় দুর করতে বর্ধমানের মহারাজা ১০৮ শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বিরাট অংশজুড়ে থাকা শিব মন্দির পর পর রাখা রয়েছে রুদ্রাক্ষের মালার আদলে।ঠিক যেনো এক বিরাট আকৃতি জপ মালা কেউ মাটিতে ছড়িয়ে রেখেছে।

একটি আলাদা শিব মন্দিরও আছে এখানে সেটি যোগ করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৯। এই ১০৯তম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে লক্ষ সাধুর উপস্থিতি ঘটেছিল। তাঁদের পদধূলি রাজপরিবার একটি সোনার কলসিতে
সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন ।

অনেকে আবার মনে করেন রানি বিষ্ণুমতির সঙ্গে এক সময় ইংরেজদের সমস্যা হয়। শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সেই সময় রানি স্বপ্নাদেশ পান মন্দির প্রতিষ্ঠার। সেই সূত্রেই পলাশীর যুদ্ধের কয়েক বছর পর নবাবহাটে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।

বর্তমানে মন্দিরে পুরোহিত রয়েছেন দু’জন। প্রতিদিন তাঁরাই এক-একটি মন্দিরে পুজো করেন। গোটা মন্দির চত্বর ঘুরে ঘুরে পুজো করতে সময়ে লাগে প্রায় দু ঘণ্টা।

শিব এখানে যে রূপে এখন পূজিত হন, সেই রূপ মূলত প্রাক-বৈদিক যুগ ও বৈদিক যুগের মিশ্র সংস্করণ।মন্দিরগুলির অবস্থান যেমন পাশাপাশি, তেমনি প্রতিটি মন্দিরের সামনেই আছে খোলা টানা বারান্দা। প্রতিটি মন্দিরই একটি দরজার। সব মন্দিরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। শোনা যায় প্রতিষ্ঠার সময়ে সবগুলি মন্দিরের সামনেই একটি করে বেল গাছ রোপন করা হয়েছিল।

বর্ধমানের শিব মন্দিরগুলিতে সারা বছরই পুণ্যার্থীদের ভিড় থাকে। বিশেষ করে শিব রাত্রির সময়ে অনেক মানুষের ভিড় হয়।

ফিরে আসবো অন্য এক শিব মন্দিরের ইতিহাস এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে
আবার আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।