ভক্তের ভগবান – সাবিত্রী এবং সত্যবান
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
শিবভক্ত, বিষ্ণু ভক্ত এবং কালী ভক্তদের নিয়ে আগে অনেকবার আলোচনা করেছি ভক্তের ভগবানে। আজকের পর্বে আলোচনা করবো সাবিত্রী ভক্তি নিয়ে যে ভক্তিতে টোলে গিয়েছিলেন স্বয়ং যমরাজ।
পুরা কালে অশ্বপতি নামক রাজার একমাত্র কন্যা ছিলেন সাবিত্রী।তার মায়ের নাম ছিল মালবী।অশ্বপতি সাবিত্রী বা গায়ত্রীদেবীকে নিষ্ঠার সাথে পূজা করে এই কন্যা লাভ করেছিলেন। তাই এই কন্যার নামও সাবিত্রী রাখা হয়েছিল।
সাবিত্রী যৌবনে উপনীত হওয়ার পর, তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে, কোন সাধারণ যুবক তাঁকে বিবাহ করতে যোগ্য বলে নির্বাচিত হলোনা না।পরে অশ্বপতি তাঁকে নিজের পছন্দমতো স্বামী খুঁজে নেবার অনুমতি দেন। সাবিত্রী বহু দেশ ঘুরে সত্যবান নামে এক যুবককে স্বামী রূপে নির্বাচন করেন।তখন দেবর্ষি নারদ এসে তার পিতাকে জানান সত্যবান স্বল্পায়ু। এরপর অশ্বপতি সাবিত্রীকে অন্য স্বামী খুঁজে নেবার কথা বললে। কিন্তু সাবিত্রী সত্যবানকেই স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। সব শুনে নারদ সত্যবানের সাথেই সাবিত্রীর বিবাহ দেওয়ার কথা বলেন। পরে অশ্বপতি সাবিত্রীকে সাথে নিয়ে দ্যুমৎসেনের আশ্রমে আসেন এবং সেখানেই সত্যবানের সাথে সাবিত্রীর বিবাহ হয়।
বিবাহের এক বৎসর পরই সত্যবানের মৃত্যুর দিন উপস্থিত হয়। সাবিত্রী এবং সত্যবান এক বনে গিয়ে উপস্থিত হন। বনে সত্যবান অবসন্ন হয়ে পড়ে যান। পরে সাবিত্রী সত্যবানের মাথা কোলে তুলে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর সাবিত্রী রক্তবস্ত্র পরিহিত বিরাটকায় এক ভয়ঙ্কর পুরুষকে সত্যবানের পাশে দেখতে পেলেন। সাবিত্রী জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে― তিনিই যম।সত্যবান পুণ্যবান এবং সাবিত্রী পতিব্রতা বলে, যমদূতের পরিবর্তে যম নিজেই এসেছেন। এরপর সত্যবানকে পাশবদ্ধ করে যমকে দক্ষিণ দিকে যেতে দেখে, সাবিত্রী যমের অনুসরণ করে অগ্রসর হন। যম তাঁকে অনুসরণ না করে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু সাবিত্রী স্তব দ্বারা যমকে সন্তুষ্ট করলে, যম তাঁকে স্বামীর জীবন ছাড়া অন্য যে কোন বর প্রার্থনা করতে বলেন।
সাবিত্রী যমের কাছ থেকে প্রথম বর প্রার্থনা করে পান কিন্তু সাবিত্রী তারপরেও যমকে অনুসরণ করা থেকে বিরত হলেন না। যম সাবিত্রীকে থামানোর জন্য পাঁচবার বর দেন। প্রথম বর ছিলো তাঁর শ্বশুরের অন্ধত্ব দূর হওয়ার বর প্রার্থনা।
দ্বিতীয় বর ছিলো তাঁর শ্বশুরের রাজ্যলাভ প্রার্থনা করেন।তৃতীয় বর ছিলো সাবিত্রীর পিতার শতপুত্র লাভ প্রার্থনা।চতুর্থ বর ছিলো সত্যবানের ঔরসে সাবিত্রীর শতপুত্র প্রার্থনা।পঞ্চম বর ছিলো সত্যবান জীবিত হওয়ার প্রার্থনা।
সাবিত্রীর নিষ্ঠা এবং ভক্তি স্বয়ং যমকেও নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। এবং যম সত্যবানকে মুক্ত করে দেন এবং সাবিত্রীকে আশীর্বাদ করে বিদায় নেন যম রাজ বিদায় নেয়ার পর সাবিত্রী সত্যবানের অচেতন শরীরের কাছে এসে তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে বসেন।পরে সত্যবানের সংজ্ঞা ফিরে এলে, উভয়েই গৃহে ফিরে যান। যমের আশীর্বাদে দীর্ঘ এবং আনন্দময় জীবন লাভ করেন সত্যবান।
ভক্তি এবং নিষ্ঠার জোরে একজন ভক্তযে স্বয়ং যমরাজের থেকে নিজের প্রিয়জনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারেন এই ঘটনা তার প্রমান।
ফিরে আসবো ভক্ত এবং ভগবানের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।