পুরানের দেব দেবী – গরুড়দেব
পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক
পুরানে দেবতা অসুর ও মানুষের পাশাপাশি কিছু অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন অদ্ভুত প্রাণীর ও উল্লেখ আছে|গরুড় দেব এদের অন্যতম|তিনি স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর বাহন|তিনি মহাবীর, তার প্রশ্নের উত্তরে সৃষ্টি হয়েছে গরুড় পুরান|তবে সব থেকে বেশি যে বিষয়টা আলোচিত হয় তা হলো গরুড়ের সাথে সাপেদের প্রবল শত্রুতা|কিন্তু কেনো এই শত্রুতা আর কবে তার সূচনা হলো।এসব জানার আগে গরুড়ের আসল পরিচয় ও স্বরূপ জানা প্রয়োজন।
গরুড় কশ্যপ মুনির সন্তান। কশ্যপের অনেক স্ত্রী ছিলেন। বিনতা তাঁদের অন্যতমা। এই বিনতার দুই পুত্র: গরুড় এবং অরুণ। কশ্যপের আর এক স্ত্রীর নাম কদ্রু। তাঁর অনেক সন্তান, সবাই সাপ। সৎ মায়ের অত্যাচার গরুর কে তার ভাইদের শত্রুতে পরিণত করে।এখানেই পারিবারিক ভাবে গরুড় ও সাপেদের শত্রুতার সূত্রপাত।পরবর্তীতে বিষ্ণু গরুড় কে তার বাহন হিসেবে নির্বাচন করেন।তার পেছনেও আছে এক রোমাঞ্চকর পৌরাণিক ঘটনা।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে গরুড়ের একবার অমৃতর খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে । অমৃত আছে দেবতাদের কাছে। গরুড় দেবলোকে অভিযান করলেন। দেবতাদের যুদ্ধে হারিয়ে অমৃতের ভাণ্ড নিয়ে গিয়ে দিলেন বিষ্ণুর কাছে। কিন্তু নিজে সেই অমৃত পান করলেন না। এই সংযম ও ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু গরুড়কে বর দিতে চাইলেন। গরুড় অমৃত চাইলেন না, কিন্তু অমরত্ব চাইলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনা করলেন যে, তিনি বিষ্ণুর রথের উপরে থাকতে চান। বিষ্ণু তাঁর সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। সেই থেকে গরুড় বিষ্ণুর বাহন।
এই ভাবে তিনি বিষ্ণুর কৃপা এবং অমরত্ব
দুটিই লাভ করলেন|
বিষ্ণুর আশীর্বাদে অমর হয়ে অমৃতের ভাণ্ডটি নিয়ে গরুড় আবার ডানা মেললেন, সেটি যথাস্থানে রেখে আসতে হবে। দেবরাজ ইন্দ্র অমৃত কেড়ে নেওয়ার জন্য চড়াও হলেন বজ্র দিয়ে আঘাত করলেন গরুড় কে । গরুড় তো অমর, কিন্তু দেবরাজের অস্ত্র বলে কথা, তার ওপর দধীচীর সম্মানও রক্ষণীয়, অতএব গরুড় তাঁর দেহের একটি পালক নিক্ষেপ করলেন, অর্থাৎ যুদ্ধে অক্ষত থাকলেন না তিনি। ইন্দ্র তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বন্ধু করে নিলেন|
আবার নাগেদের সঙ্গেও বিষ্ণুর একটা সম্পর্ক আছে। নাগকুলে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হলেন অনন্তনাগ বা শেষনাগ। বিষ্ণু তাঁর ওপর শয়ন করেন। অনন্তনাগ যখন নিজের দেহটি পাকিয়ে ফেলেন, তখন সময় পিছন দিকে যায়, ব্রহ্মাণ্ডের লয় হয়। তিনি যখন পাক খোলেন, সময় এগিয়ে যায়, ব্রহ্মাণ্ডের আবার সৃষ্টি হয়|এই নাগও আবার পরম বিষ্ণু ভক্ত অর্থ্যাৎ দুই বিষ্ণু ভক্তের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বা মৃদু শত্রুতা কিছু অস্বাভাবিক নয়|
প্রাকৃতিক ভাবে গরুড়ের সাথে নাগেদের সম্পর্ক খাদ্য ও খাদকের |গরুড়ের প্রধান খাদ্য সাপ তাই গরুড় কে সাপেরা ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক|প্রাকৃতিক নিয়মে এরা একে অপরের শত্রু|
গরুড় ও সাপেদের শত্রুতা নিয়ে শাস্ত্র গুলিতে একাধিক ঘটনার বর্ণনা আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রামায়ণ এর একটি ঘটনা যখন রাম সেনা নাগ পাশে আবদ্ধ তখন তাদের উদ্ধার করতে আসে স্বয়ং গরুড় দেব | তার আসার পর সকলে নাগ পাশ থেকে মুক্ত হয়ে আবার রাবন সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়।আবার গরুড় যখন নিজের গতির জন্য অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন তখন বিষ্ণুর আদেশে হনুমান গতিতে গরুড়কে পরাস্ত করে তাকে সঠিক দিশা দেখিয়েছিলেন।
আবার পর্বে অন্য এক পৌরাণিক দেবতা এবং
তার সাথে জড়িত একাধিক পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো পরের পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।