একান্নপীঠ – কামাখ্যা

137

আজকের একান্ন পীঠ পর্বে লিখবো

অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি পীঠ কামরুপ কামাখ্যা নিয়ে। এই কামরূপ কামাখ্যায় নিহিত আছে বহু রহস্য, রোমাঞ্চএবং পৌরাণিক গল্পগাথা।আজ চেষ্টা করছি এই প্রতিটি আঙ্গিক ছুঁয়ে যেতে।

 

বলা হয় একসময় এ জায়গায় কেউ গেলে আর ফিরে আসত না। এখনো জাদুবিদ্যা সাধনার জন্য বেছে নেওয়া হয় কামাখ্যা মন্দিরকেই। কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা। এমনকি এক কালে বৈদেশিক শত্রুরা বিশ্বাস করতো কামরূপ-কামাখ্যার অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন মায়াবী নারীরা পুরুষদের মন্ত্রবলে ভেড়া বানিয়ে রাখতো|তাই অনেকেই এই পথ মাড়াতে চাইতো না সহজে|

 

মহাভারতের যুগে এই স্থনের নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষ। পাল রাজারা এককালে শাসন করতো এই প্রদেশ|এই আসামেরই কামরুপ জেলার নীলকন্ঠ পাহাড়ের চূড়ায় প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে সিদ্ধ পীঠ কামরূপে মায়ের মাতৃ যোনি পতিত হয়েছিল কামাখ্যাকে বলা হয় তীর্থচূড়ামণি। তীর্থচূড়ামনির অর্থ হলো সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থ স্থান।

 

এই স্থানে নরকাসুর এবং দেবী কামাখ্যাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন বশিষ্ট দেব। এই স্থানেই শিবের অভিশাপে নিজ রূপ হারিয়ে পুনরায় নিজের স্বরূপ ফিরে পেয়েছিলেন কামদেব।

 

যেখানে সতীর যোনি মন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ।কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে সতীর অঙ্গ পতিত হওয়ার পর এই উচ্চ পর্বত মহামায়ার শ্রী অঙ্গের ভার সহ্য করতে না পেরে কেঁপে উঠলো এবং ক্রমশঃ পাতালে প্রবেশ করতে লাগলো। তখন দেবতাদের অনুকম্পায় এই পর্বত পাতালে প্রবেশ থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু মতৃ যোনি পতিত হওয়ার ফলে পর্বতের রং নীল বর্ণ ধারণ করেছিল তাই পর্বতের নাম হলো নীলকণ্ঠ বা নীলচল পর্বত।

 

এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও বিদ্যমান।

দেবীর ভৈরব একজন নয় নয়জন।তাই মনে করা হয় সুদূর অতীতে কোনো এক সময়ে হয়তো এখানে নয়টি শক্তিপীঠ ছিলো। যদিও এখন একটি শক্তিপীঠ ই জনসমক্ষে অবস্থিত।

 

মনেকরা হয় মূল কামাখ্যার মন্দিরটি নাগারা স্থাপত্যশৈলীর মন্দির ছিল। বর্তমান কামাখ্যা মন্দিরে গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ সম্বলিত চারটি কক্ষ রয়েছে যেগুলোর স্থানীয় নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন এবং নাটমন্দির। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।বর্তমান মন্দিরটি সংস্কার করেছিলেন কোচ বিহারের রাজা নরনারায়ণ।

 

অম্বুবাচি কামাখ্যা মন্দিরের প্রধান উৎসব। অম্বু বাচির সময়ে দেশ বিদেশথেকে মাতৃ সাধক এবং তীর্থযাত্রীরা এখানে আসেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য এক শক্তিপীঠ সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।