বহু প্রতিক্ষিত দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথির সূচনা হবে আর কিছু দিন পরেই। দীপাবলীর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আজ আপনাদের শেওড়াফুলির নিস্তারিণী কালী মন্দিরের অলৌকিক বৃত্তান্ত জানাবো।কলকাতা থেকে কিছু দূরে শেওড়াফুলিতে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন কালী মন্দিরটি।প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেওড়াফুলি রাজবংশের রাজা হরিশ্চন্দ্র রায়|এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথেও জড়িয়ে আছে এক আশ্চর্য ও অলৌকিক কাহিনী|শোনা যায় রাজা হরিশ্চন্দ্র ছিলেন পরম ধার্মিক। নিষ্ঠাবান এবং দেবী কালিকার ভক্ত। কোনোএক অজ্ঞাত কারণে রাজামশাই একবার অনুতপ্ত ও অনুশোচনায় জর্জরিত হয়ে কাউকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে পড়লেন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে|তবে কালী কৃপায় রাজার আর আত্মহত্যা হয়ে ওঠেনি|ঘুরতে ঘুরতে রাজা আশ্রয় নেন গভীর জঙ্গলের মধ্যে এক গাছের তলায়| ক্রমে ঘনিয়ে এল রাত। ক্লান্ত রাজা ঢলে পড়লেন ঘুমে। নিদ্রাকালে রাজা স্বপ্নে পেলেন দেবীকে। দেবী স্বপ্নাদেশ দিলেন রাজাকে। তিনি যেন গঙ্গাতীরে মন্দির ও দক্ষিণা কালীর মূর্তি স্থাপন করেন। যে শিলাখণ্ডের উপর তিনি শুয়ে আছেন সেটি দিয়েই নির্মাণ করতে হবে দেবী বিগ্রহ। হতচকিত রাজা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন এক অদ্ভুত কাণ্ড। তিনি যার উপর শুয়েছিলেন সেটি সত্যিই একটি শিলাখণ্ড|রাজার আদেশে সেই শিলা খন্ড তুলে রাজপ্রাসাদে আনা হলো|এর কিছুদিন পরেই নাকি রাজার সাথে দেখা করতে এলেন এক মূর্তিকার যিনি ওই শিলা খন্ড দিয়ে মূর্তি তৈরীর ইচ্ছে প্রকাশ করলেন|তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালে দৈব আদেশ পালন করতেই তার আগমন|এরপর রাজা মূর্তি নির্মাণের আদেশ দিলেন। যথাসময়ে সঠিক নিয়মে গড়া হল মায়ের মূর্তি। মন্দিরে স্থাপিত হল মূর্তিটি।আরেকটি প্রচলিত জনশ্রুতি মতে রানী রাসমণি এসেছিলে এই মন্দিরে এবং এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থেকে ছিলেন।স্বয়ং দেবী একটি বালিকার রূপে রানীকে দর্শন দিয়েছিলে। রানী রাসমণি তার কাছের মানুষদের সেই অদ্ভুত এবং অলৌকিক ঘটনার কথা বলেছিলেন বলে শোনা যায়।শোনা যায় মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজা হরিশ্চন্দ্র মন্দিরের পশ্চিমে নির্মাণ করলেন একটি কুটির। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি কাটাতেন এই কুটিরে। শোনা যায়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজা এভাবেই কাটিয়েছিলেন|মন্দিরের পাশেই রয়েছে নাট মন্দির এবং শিব মন্দির|মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে হাড়ি কাঠ|এই মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপর তামার বেশ বড় একটা পাপড়িওয়ালা পদ্ম। তার উপরেই দুহাত মাথার দিকে তোলা মহাদেবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে মা নিস্তারিণী। কষ্টিপাথরে খোদাই করা আছে দক্ষিণাকালীর রূপ। দেবী ত্রিনয়নী এবং এলোকেশী। করুণা ভরা চাউনি। দেবীমূর্তি উচ্চতায় আড়াই-তিন ফুট|মন্দির সংলগ্ন একটি বিশেষ কক্ষে রয়েছে মহিষমর্দ্দিনী দশভুজা। কষ্টিপাথরের বহু প্রাচীন এই বিগ্রহ। আছে দেবাদিদেব মহাদেব। লক্ষ্মী, গণেশ এবং শ্বেতপাথরের দেবী অন্নপূর্ণার মূর্তি।আজও দীপান্বিতা অমাবস্যা সহ প্রতি অমাবস্যায় মায়ের পুজো হয়। বলিও হয় সেদিন। বহু দুর দুর থেকে মানুষ আসেন এখানে।আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|আবার ফিরবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে|পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।