দূর্গা কথা – বাঁকুড়ার বাগদি পাড়ার পুজো

87

সাধারণত যে বনেদি বাড়ির দূর্গাপুজো নিয়ে বেশি আলোচনা হয় সেগুলি হয় কোনো ধনী জমিদার বা সেকালের কোনো রাজা মহারাজার বাড়ির পুজো আজ যে পূজো নিয়ে আলোচনা করবো তা সেই অর্থে বনেদি না হলেও আভিযাত্য বা প্রাচীনত্বের বিচারে কোনো অংশে কম নয়।পূজোর সূচনা হয়ে ছিলো দেবীর স্বপ্নাদেশে দেবী স্বয়ং বলে দিয়েছিলেন পূজোর রীতি নীতি এমনিকি পূজোর ব্যাতিক্রমী ভোগ ও দেবী নিজেই ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় পরে আসছি তার আগে এই পূজোর সূচনার ইতিহাস এবং পটভূমি জেনে নেয়া প্রয়োজন।আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে বাঁকুড়া জেলার জয়পুর থানার রাউৎখন্ড নামক প্রাচীন জনপদ ছিল তৎকালীন বর্ধমান রাজা মাহাতব চাঁদের অধীনে। এই রাউৎখণ্ড এলাকার সমস্ত খাজনা আদায় করে নৌকায় চাপিয়ে তা বর্ধমান রাজ পরিবারে পৌঁছে দিতো এক পরিবার।রাজামশাই ওই বাগদী পরিবারের পদবী দিয়েছিলেন আটপৌরি। সেই থেকে ওই গ্রামের নামও হয় আটপৌরি। পরবর্তীতে এলাকাটি বাগদীপাড়া নামে পরিচিত।একটি অলৌকিক ঘটনা এই পুজো কে কেন্দ্র করে আজও শোনা যায়। জনশ্রুতি মতে একবার সেই বাগদী পরিবারের কর্তা গ্রামের কাছেই একটি জলাশয়ে মাছ ধরতে যান। ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় এবং তিনি কিছুতেই তাঁর মাছ ধরার জাল একা সামলাতে পারছিলেন না। তখনই এঅপরূপাসুন্দরী রমণীর আবির্ভাব হয় এবং তিনি সেই তাকে মাছ ধরায় সাহায্য করেন।বাগদী পরিবারের ওই কর্তা আগন্তুক রমণীকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে তিনি তার বাড়ির মেয়ে এবং সেই মুহূর্তে তিনি তার সঙ্গে বাড়িও আসতে চান।বাগদী পরিবারের ওই কর্তা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজী হয়ে যান তাঁকে বাড়ি আনতে। দুজনে গল্প করতে করতে গ্রামের দিকে রওনা হন। সেই রমণী পেছনে এবং কর্তা আগে হাঁটতে শুরু করেন।গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছে বাগদী পরিবারের কর্তা। পিছনে ফিরে দেখেন ওই রমণী অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। মন ভারাক্রান্ত করে বাড়ি ফিরে আসেন বাগদী পরিবারের কর্তা। অলৌকিক ভাবে সেই রাতেই দেবী স্বপ্নে দেখা দেন বাগদি পরিবারের কর্তাকে এবং তাঁকে বাড়িতে দূর্গা রূপে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন। বাগদি পরিবারের কর্তা মাকে তাদের আর্থিক অভাবের কথা জানালে দেবী নির্দেশ দেন প্রতিদিন বাড়িতে যে আহার হয় তা দিয়েই যেন ভোগ নিবেদন হয়। সেই শুরু। বাড়ির সাধারণ খাবার দিয়েই ভোগ নিবেদন হয় এখানে । দেবীর নির্দেশ মেনেআজও পোড়া রুটি ও পান্তা ভাতে পুজিতা হন বাগদী পাড়ার দেবী দুর্গা। দেবী এখানে চতুর্ভুজা এবং বৈষ্ণবী রূপে বৈষ্ণব মতে পূজিতা হন।ফিরে আসবো ঐতিহাসিক দূরে পূজো নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে এমনই কোনো প্রাচীন দূর্গা পূজোর কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।