শিব চতুর্দশী – শিব ও তন্ত্র

707

শিব ও তন্ত্র দুটি পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। শিব সংক্রান্ত এই আলোচনায় তন্ত্র নিয়ে কিছু বলার উচিৎ। আজকের পর্বে মহাদেবের সাথে তন্ত্র শক্তির সম্পর্ক নিয়ে লিখবো।

তন্ত্র – ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু গভীর তার অন্তর্নিহিত অর্থ। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও অতিপ্রাচীন গুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় সাধন বিষয়। মুক্ত বিশ্বকোষে বলা আছে, তন্ত্র হিন্দুসমাজে প্রচলিত ঈশ্বর উপাসনার একটি পথবিশেষ। আসলে শিব ও মহাশক্তির উপাসনা সংক্রান্ত শাস্ত্রগুলিকেও তন্ত্র সাধনা নামে অভিহিত করা হয়।তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী, এই মহাবিশ্ব হল শিব ও মহাশক্তির দিব্যলীলা।যদিও তন্ত্র শব্দটির অর্থ ব্যাপক। তবে সংক্ষেপে তন্ত্র হচ্ছে “সৃষ্টির পরিচালনার নিয়ম”।

তন্ত্রে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির বর্ণনা রয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।তন্ত্রের সঙ্গে মহাদেবের সম্পর্ক অতি গভীর বলা ভালো মহাদেব থেকেই তন্ত্রের উৎপত্তি কারন শিবের ডমরু থেকে তন্ত্রের জন্ম হয়েছে ডমরু মহাদেবের অন্যতম প্ৰিয় বস্তু।

আবার সতী বা দেবী দুর্গার দশ হাতে আছেন দশ মহাবিদ্যা। এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই তন্তশাস্ত্রর ব্যাবহারিক দিকটি গড়ে উঠেছে।জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রতিটি গ্রহ দশ মহাবিদ্যার একেকটি বিদ্যার অধীনে আছে।

সংক্ষেপে তাই বলাই মহাদেব ও আদ্যা শক্তি মহামায়া এই দুই অনন্ত ও অসীম শক্তি তন্ত্রের আধার।

ভারতের আদি ও অকৃত্রিম তন্ত্র সাধনার জায়গা হল নীলাচল পর্বত। যা ‘কামাখ্যাধাম’ নামে পরিচিত।তেমনই মহাদেবের বাস কৈলাশ পর্বতেও বহু অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি আছে যাকে অনেকেই তন্ত্রশক্তির সাথে তুলনা করেন।

তন্ত্র এমনই একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে নিজেকে অনুসন্ধান করা যায়। নিজের অন্তরের ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়।

তন্ত্র জ্ঞানচক্ষু উম্মোচন করে। সৃষ্টির কারন বুঝতে সাহায্য করে তন্ত্র। তন্ত্র সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের পরিচালনা শক্তি। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এই তিন শক্তির সমন্বয়ে সাধিত হয় তন্ত্র শক্তির অদৃশ্য বৃত্ত যা আমাদের জীবন ও সমগ্র সৃষ্টিকে পরিচালনা ও প্রভাবিত করে।

যারা তন্ত্র মতে এবং শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে জীবনের অন্ধকার দূর করতে চান বা গ্রহগত কু প্রভাব কাটিয়ে জীবনে জয়ী হতে চান তারা শিব রাত্রি যুক্ত অমাবস্যাকে বেছে নিতে পারেন গ্রহ দোষ খন্ডনের জন্য।

ফিরে আসবো পরের পর্বে। শিব বিষয়ে আরো অনেক কথা বলার আছে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।