সনাতন ধর্মে যে আঠেরোটি উপপুরান আছে তারমধ্যে অন্যতম কালীকা পুরান|এই পুরানে একাধিক শাস্ত্রীয় বিষয়ের ব্যাখ্যা ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে|যার মধ্যে বেশ কয়েকটি নিয়ে আগামী কয়েকটি পর্বে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো|প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহা শিবরাত্রি পালিত হয়। কালীকা পুরান মতে এই তিথিতেই হয়েছিল শিব ও পার্বতীর বিবাহ|পাশাপাশি বিবাহের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে|শুরু করবো শিবের বিবাহ দিয়ে|পার্বতীর কাছ থেকে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে দেবতারা কন্দর্প নামক তাদের এক দূতকে শিবের কাছে পাঠান।শিব সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ও তৃতীয় নেত্র দিয়ে কন্দর্পকে ভস্ম করে দেন। কিন্তু দীর্ঘ কাল কঠোর তপস্যা করে শিবকে মনে মনে নিজের স্বামীরূপে মেনে নিয়েছিলেন পার্বতী।পার্বতীর দীর্ঘশ্বাস ও মনের ব্যাথ্যায় সমস্ত স্থানে হাহাকার শুরু হয়েছিল। বড় বড় পর্বতের ভিতও নড়ে গিয়েছিল। তখন শিব নিজের ধ্যান থেকে উঠেছিলেন এবং পার্বতীকে বলেছিলেন যে তিনি যেন তাকে বিবাহের ইচ্ছা ত্যাগ করেন ও কোনও যুবরাজের সঙ্গে বিয়ে করে নেন কারণ শিবের সঙ্গে বসবাস করা সহজ নয়।কিন্তু হিমালয় কন্যা পার্বতী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি শিব ছাড়া কাউকে বিবাহ করবেন না। পার্বতীর ভালোবাসা দেখে মহাদেব তাঁকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হন|কিন্তু তাদের বিবাহ সম্পন্ন হওয়াও বেশ নাটকীয় ছিলো|শিব যখন পার্বতীর সঙ্গে বিবাহ করতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ডাকিনি, ভূত-প্রেত, পেত্নী ছিল। ডাকিনি ও পেত্নীরা শিবকে ভস্ম দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ও নরমুন্ডের মালা পরিয়েছিলেন কণ্ঠে ছিলো বাসুকি নাগ|শিবের এই আশ্চর্যজনক বরযাত্রী পার্বতীর গৃহে পৌঁছালে সমস্ত গিরিরাজ ও মেনকা সহ সব দেবতা চমকে গেছিলো ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এই বিচিত্র রূপে শিবকে মেনে নিতে পারেননি পার্বতীর মা। তখন তিনি শিবের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিবাহ দিতে অসম্মত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি খারাপ দিকে এগোতে দেখে পার্বতী শিবকে বিবাহের জন্য নিয়মনীতি অনুযায়ী তৈরি হয়ে আসতে প্রার্থনা করেছিলেন। শিব তাঁর প্রার্থনা স্বীকার করেছিলেন। সমস্ত দেবী-দেবতাকে সুন্দর ভাবে বরবেশে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। ঐশ্বরিক জল দিয়ে মহাদেবকে স্নান করানো হয়, রেশমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। শিবের এই দিব্য রূপ দেখে পার্বতীর পিতা মাতা সহ উপস্থিত সকলে বিবাহে রাজি হয়েছিল|স্বয়ং ব্রহ্মার উপস্থিতিতে ও পৌরোহিত্বে শিব পার্বতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। আগামী পর্বে কালীকা পুরান অনুসারে এমনই কোনো পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে আবার ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|