গত কাল কোচ বিহার রাজবাড়ি ও বিখ্যাত মদন মোহন মন্দির দর্শনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলাম|কথা দিয়েছিলাম আজ বানেশ্বর মন্দির দর্শনের অভিজ্ঞতাও যথা সময়ে আপনাদের সাথে আবার ভাগ করে নেবো,আজ সকালেই শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে, উত্তরের ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শ উপেক্ষা করে হাজির হয়েছিলাম বানেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে, অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো|জানলাম অনেক তথ্য, দেখলাম অনেক কিছু – কোচ বিহারের আদি শাসক বংশ, অর্থাৎ কোচ রাজারা ছিলো বেজায় ধার্মিক ও পরম শিব ভক্ত যদিও কৃষ্ণ তাদের আরাধ্য তবু অন্যান্য দেব দেবীদের মূর্তিও তৈরি করিয়েছিলেন সারা রাজ্য জুড়ে, তাদের আমলের মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম একটি মন্দির হল ‘বানেশ্বর শিব মন্দির’। বানেশ্বর রূপে ভগবান শিব এখানে পূজিত হয়ে আসছেন বহুদিন ধরে।যদিও মন্দির প্রতিষ্টার সঠিক দিন ক্ষণ পাওয়া যায়না তবে কোচবিহারের প্রবীণ মানুষেরা মনে করেন। কোচ রাজবংশের মহারাজা নরা নারায়ণ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পরবর্তীকালে কোচবিহার রাজ্যের মহারাজা প্রাণ নারায়ণ এটিকে সংস্কার করেছিলেন এবং নব রূপ দিয়েছিলেন|বানেশ্বর মন্দিরের প্রধান দালান থেকে ১০ ফুট নীচে, মন্দিররের গর্ভগৃহে রয়েছে আদি বানেশ্বর ‘শিব লিঙ্গ’ প্রধান মন্দিরের ডানদিকে সিমেন্টের তৈরি একটি নন্দী মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের উত্তর দিকে একটি চালাঘরে শিব ও অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি রয়েছে। অন্যান্য দিকে একটি কালী মূর্তি সহ আরও কিছু দেব দেবীর মূর্তিও রয়েছে।মন্দিরের সব থেকে বড় উৎসব শিব চতুর্দশীর সময় একটি সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে এই মন্দির এলাকায়।তাছাড়া প্রতিদিনই পুজো হয় এবং বহু দর্শণার্থী আসেন পুজো দিতে|প্রতিদিন সকাল ৮-টায় খুলে দেওয়া হয় মন্দির প্রাঙ্গণ। এবং মন্দির বন্ধ করা হয় রাত ৮-টার সময়|দুপুরে মন্দিরে ভোগ আরতী করা হয়। এবং সন্ধ্যে বেলায় সন্ধ্যে আরতি করা হয় ৬-টার সময়।কথিত আছে এই বানেশ্বর মন্দিরে মানসিক রোগীদের নিয়ে এলে ও পুজো দিলে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে যান|কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর|আর বাবা মহাদেবের কৃপায় সবই সম্ভব|তাই সেই উদ্দেশ্যেও আসেন অনেকেই|বানেশ্বর মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে একটি বড় জলাশয় যেখানে অনেকগুলি কৃষ্ণ বর্নের বিরল প্রজাতির কচ্ছপ আছে। এই কচ্ছপ গুলি স্থানীয়ভাবে ‘মোহন’ নামে পরিচিত। এখানে এদেরকে খুব পবিত্র মনে করা হয় এবং এদের পুজোও করা হয়। আগে পুকুরের ঘাটের কাছে গিয়ে মোহন বলে ডাক দিলে দেখা পাওয়া যেত এদের।যুগ যুগ ধরে এই প্রাণী গুলি রয়েছে এই পুকুরে|কবে এবং কোথাথেকে তারা এই পুকুরে এলো সেই প্রশ্নের উত্তর অজানা|তবে তারা কোচবিহারের বহু ইতিহাস ও বহু রাজনৈতিক এবং সামাজিক উত্থান পতনের নীরব সাক্ষী|বর্তমানে পুকুরটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে তবুওদূর থেকেও কচ্ছপ গুলি দেখতে পাওয়া যায় মাঝে মাঝে।তাদের দর্শন পাওয়া সৌভাগ্যর ব্যাপারবলে মনে করা হয়|সব দেখে ও শুনে আমি অভিভূত|আশা করি আপনাদের ও ভালো লাগলো এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা|আবার আসবো সুযোগ পেলে|সঙ্গে থাকুন|পরবর্তী যাত্রা যেখানেই হোক সে অভিজ্ঞতা নিয়েও লিখবো যথা সময়ে|পড়তে থাকুন|জানান আপনাদের মতামত|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|