তীর্থক্ষেত্রে পন্ডিতজি – কামরূপ কামাখ্যা

1144

অম্বুবাচি উপলক্ষে আমার টিভির অনুষ্ঠানে ও ধারাবাহিক লেখালেখিতে ইতিমধ্যে উঠে এসেছে কামাখ্যা মন্দিরের কথা আজ নিছক পর্যটকের চোখ দিয়ে তীর্থ ক্ষেত্র হিসেবে এই স্থানের বর্ণনা করবো|আসামের গুয়াহাটি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কামরূপ কামাখ্যা। এখানে রয়েছে সারি সারি পর্বতমালা। এর ঠিক পাশেই ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রে মা কামাখ্যার মন্দির।রহস্য,আধ্যাত্মিকতা, পৌরাণিক ঘটনা ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যর দিক দিয়ে কামাখ্যা কামরূপ কামাখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থল|ছোট্ট দুটি শব্দ ‘কামরূপ কামাখ্যা’। আর এই দুটি শব্দের মধ্যেই লুকানো তাবৎ রহস্য, রোমাঞ্চ আর গল্পগাথা।বলা হয় একসময় এ জায়গায় কেউ গেলে আর ফিরে আসত না। এখনো জাদুবিদ্যা সাধনার জন্য বেছে নেওয়া হয় কামাখ্যা মন্দিরকেই। কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা। এমনকি এক কালে বৈদেশিক শত্রুরা বিশ্বাস করতো কামরূপ-কামাখ্যার অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন মায়াবী নারীরা পুরুষদের মন্ত্রবলে ভেড়া বানিয়ে রাখতো|তাই অনেকেই এই পথ মাড়াতে চাইতো না সহজে|আজও এই তীর্থে পদার্পন করলে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয় যা আমি প্রত্যেকবার অনুভব করেছি|মহাভারতের যুগে এই স্থনের নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষ। পাল রাজারা এককালে শাসন করতো এই প্রদেশ|এই আসামেরই কামরুপ জেলার নীলকন্ঠ পাহাড়ের চূড়ায় সন্ধান মেলে এক প্রাচীন মন্দিরের,এই প্রাচীন মন্দিরটিই কামাক্ষা দেবীর মন্দির নামে পরিচিত।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে সিদ্ধ পীঠ কামরূপে মায়ের মাতৃ যোনি পতিত হয়েছিল বিধায় এই স্থানটি ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম প্রধান এবং গুরুত্বপুর্ণ শক্তিপীঠ। যে স্থানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল সেই স্থান হচ্ছে তীর্থচূড়ামণি। তীর্থচূড়ামনির অর্থ হলো সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থ স্থান। যেখানে সতীর যোনি মন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ।কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে মহামায়া সতীর যোনি অঙ্গ পতিত হওয়ার পর এই উচ্চ পর্বত মহামায়ার যোনি মন্ডলের ভার সহ্য করতে না পেরে কেঁপে উঠলো এবং ক্রমশঃ পাতালে প্রবেশ করতে লাগলো। তখন দেবতাদের অনুকম্পায় এই পর্বত পাতালে প্রবেশ থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু মতৃ যোনি পতিত হওয়ার ফলে পর্বতের রং নীল বর্ণ ধারণ করেছিল তাই পর্বতের নাম হলো নীলকণ্ঠ বা নীলচল পর্বত।পৌরাণিক এই মন্দিরটি ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম প্রধান পীঠস্থান। এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও বিদ্যমান। মনেকরা হয় মূল কামাখ্যার মন্দিরটি নাগারা স্থাপত্যশৈলীর মন্দির ছিল। বর্তমান কামাখ্যা মন্দিরে গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ সম্বলিত চারটি কক্ষ রয়েছে যেগুলোর স্থানীয় নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন এবং নাটমন্দির। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।কামাখ্যা মন্দিরের প্রধান উৎসব বলাযায় উৎসবকে দেশ বিদেশথেকে মাতৃ সাধক ও তীর্থযাত্রীরা এখানে আসেন ওই সময়ে|আর কয়েকটি দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে সেই উৎসব|আবার আগামী কোনো পর্বে অন্যকোনো তীর্থ ক্ষেত্র নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|