কালী তীর্থ – প্রল্হাদ ডাকাতের বামা কালী

505

আজ কালী ক্ষেত্রতে লিখবো ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদের প্রতিষ্ঠিত কালী বামার কথা| পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাণ্ডুক গ্রামের ডাকাত দলের প্রতিষ্ঠিত প্রায় ৩৫৩ বছরের পুরোনো বামা কালী বেশ বিখ্যাত ।পাণ্ডুক গ্রামের মেটে পরিবারের পূর্ব পুরুষেরা বর্ধমানের বিখ্যাত ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা সালারের কাছে কেতুগ্রাম থানার মেটলি গ্রামের ‘রামসীতা’ মন্দিরের স্বর্ণ অলঙ্কার ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন। পথে বীরভূমের মুলুকের কাছে অপরূপা নারী মূর্তি দেখে ডাকাতরা চমকে ওঠেন। কিন্তু ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ মেটের নির্দেশ ছিল, ডাকাতির পথে মেয়ে মানুষ আর শিশুর গায়ে হাত তোলা যাবে না শোনা যায় একবার সে নীতি লঙ্ঘন করায় এক সদস্যকে সর্দার প্রহ্লাদ এক কোপে দু’টুকরো করে দেন। সেই অপরিচিতা নারীর কাছে জানতে চান, ‘এই রাত্রিকালে আপনি কে মা?’ তখন সেই নারী জানান, আমি কালী বামা।ডাকাতি করতে যাওয়ার পথে দলটি দেখে মা মৃন্ময়ী মূর্তি থেকে চিন্ময়ী মূর্তি ধরে জানান, আমাকে এখান থেকে নিয়ে না গেলে তোদের সর্বনাশ হবে। সেই মতো মায়ের এই বিশাল মূর্তিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে অসুবিধার কথা বলেন ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ। সেই সঙ্গে বলেন, আজকে রাতে ডাকাতিতে সাফল্য পেলে তবেই মা তোকে নিয়ে যাব। কথিত আছে, মায়ের আর্শীবাদে সাফল্যও পায় ডাকাত দলটি। তাই ডাকাতি করে ফেরার পথে বামা মায়ের ছোট শিলা মূর্তিকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ডাকাত দলটি। পাণ্ডুক গ্রাম ঢোকার পথে মায়ের নির্দেশ মতো তির ছোড়েন এবং সেই তির এসে পাণ্ডুক গ্রামের মাঝখানে পড়ে। সেখানেই মা বামাকে স্থাপন করেন সাধক ডাকাত প্রহ্লাদ। কার্তিক মাসে আমাবস্যার গভীর রাতে, ঢাক ঢোল বাজিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা মায়ের ঘট এনে পুজো করতেন। পুজো হয়ে গেলে পর দিন রাতে কাঁধে তুলে মাকে রসফাল্লা পুকুরে বিসর্জন করা হয় ।তারপরই ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ-সহ সকলে কাঁদতে থাকেন মায়ের টানে। তাই মা বামার নির্দেশে পরবর্তীতে বারমাস পুজোর জন্য আর একটি মূর্তি গড়ে ডাকাত দলটি। সেখানে পুজো দিয়েই ডাকাতিতে বের হতেন তাঁরা। বর্তমানে দেবীর বিশাল মন্দির তৈরি হয়েছে। যা দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তবে পুরোনো রীতি মেনে এখনও ডাকাত পরিবারের সদস্যরা বামা কালীর পুজোতে কোনও না কোনও জিনিস চুরি করে আনেন|এখানে মায়ের বাঁ পা-টি এগিয়ে থাকে। কার্তিক মাসের আমাবস্যায় ২২ ফুট উচ্চতার মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়।বাংলার ডাকাত কালী গুলির মধ্যে অন্যতম এই প্রহ্লাদ ডাকাতের বামা কালী|চলতে থাকবে কালী ক্ষেত্র|দেখতে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|