কালীতীর্থ – রত্নাবলী

428

রত্নাবলী কালী সতীর ৫১ পীঠের একটি হুগলির খানাকুলের রত্নাবলী কালী।কথিত আছে, শ্বেত পলাশ গাছের নিচে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ অর্থাৎ ডান দিকের কাঁধ পড়েছিল। পরবর্তীতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মন্দির বানান সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী। কথিত খানাকুলের উবিদপুর দিয়ে একসময় রত্নাকর নদী বয়ে যেত। সেই নদী আজ আর নেই। নদীর চিহ্ন হিসেবে পড়ে রয়েছে মাজা এক খাল। প্রশ্ন কী ভাবে হারিয়ে গেল সেই নদী স্থানীয়রা বলেন, একসময় এই নদী ছিল বিশাল চওড়া। গুপ্ত বৃন্দাবনের সাধক অভিরাম গোস্বামী এই নদীতটে একদিন স্নান করছিলেন। হঠাৎই নদীর জল ফুলে ফেঁপে জোয়ার আসে। সেই জোয়ারের জলে অভিরামের কৌপিন ভেসে চলে যায়। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সাধক তখন নদীকে শাপ দেন। বলেন, এই মুহূর্তে তুই অন্ধ হয়ে যা। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই তুই অন্তর্বর্তী শিলা হয়ে মাটির তলা দিয়ে বইবি। ওপরে ব্যাপ্তি আর থাকবে না। কথিত আছে এর পর থেকেই নদীর জল শুকোতে থাকে। নদী শুকিয়ে হয়ে যায় খাল যাকে এলাকায় কানা দ্বারকেশ্বর খাল বলেই পরিচিত।আদিকালের রত্নাকর নদী তথা বর্তমানের কানা দ্বারকেশ্বর খালের ধারেই কালীমন্দির। মন্দিরের পুরোহিতদের থেকে জানা গেল, আনুমানিক ৭১২ সালে খানাকুলে প্রতিষ্ঠিত হয় ঘন্টেশ্বর শিবমন্দির। তার দু’বছর পর অর্থাৎ ৭১৪ সালে মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী। তখন থেকেই দেবীর পূজা হয়ে আসছে। আজও একইভাবে পূজিত হন মা। প্রতি অমাবস্যায় ঘটা করে পুজো হয়। যারা জানেন, তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আসেন। প্রতিষ্ঠার সময় এই মন্দিরটি ছিল একটি তালপাতার কুঁড়েঘর। বহু বছর পর বর্ধমানের মহারাজা এই মন্দিরটি পাকা করেন। সেই কাঠামোই এখনও রয়েছে।প্নাদেশ পাওয়া স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী পাথরে পরিণত হওয়া দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধটি মঙ্গলঘটের নীচে রেখে দেবীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। রত্নাকর নদীর তীরে মন্দিরটি গড়ে উঠেছিল বলেই এখানে মায়ের নাম রত্নাবলী বলে মনে করেন অনেকে। সাধক স্বরূপনারায়ণ মহারাজ পঞ্চমুণ্ডির আসনে ঘটে পুজো শুরু করেন। তার বহু কাল পরে মায়ের মূর্তি স্থাপন করা হয়। তাও আনুমানিক প্রায় ১২০০ বছর বা তারও আগের হবে।’এখানে মায়ের চার হাত।যথারীতি এই মন্দিরের প্রথম পূজারী ছিলেন স্বরূপানন্দ মহারাজ। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ তাঁর মুখে এসে পড়েছিল। তিনি তা দেখতে পান। তখনই মায়ের এই আদেশ পান স্বরূপানন্দ এবং সূচনা হয় পুজোর|মন্দিরের পাশেই রয়েছে ঘণ্টেশ্বর শিবমন্দির যেখানে যা এই স্থানের অধ্যায়ত্মিক আরো বৃদ্ধি করে|যা দেখতে আসেন দূর দুরন্তের মানুষ|চলবে কালীতীর্থ ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য কোনো কালী মন্দির নিয়ে পড়তে থাকুন|