শক্তিপীঠ – মেলাই চন্ডী

1335

লেখা লেখি নিয়ে প্রায় নিয়মিত আপনাদের সামনে এলেও বহুদিন কোনো শক্তিপীঠ নিয়ে লেখা হয়নি,তাই আজ ঠিক করলাম বাংলারই একটি তথাকথিত কম জনপ্রিয় কিন্তু অত্যান্ত জাগ্রত ও তাৎপর্যপূর্ণ শক্তি পীঠ নিয়ে লিখবো, আজকের পর্বে বিতর্কিত শক্তি পীঠ মেলাই চন্ডী|

শুরুতেই এই শক্তিপীঠ কে বিতর্কিত বললাম তার
কারন এই পীঠ সর্বজন স্বীকৃত নয় অর্থাৎ পীঠ নির্ণয় তন্ত্রে এই পীঠকে শক্তিপীঠের মর্যাদা দেয়া হয়নি তবে অন্য কিছু প্রাচীন শাস্ত্রে মেলাই চন্ডীকে পীঠ হিসাবেই দেখানো হয়েছে|১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্যে আমতার মেলাইচণ্ডীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

যারা বিশ্বাস করেন এটি শক্তিপীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর হাঁটুর মালাইচাকী পতিত হয়ে ছিলো এই স্থানে এবং সেই কারনেই এই পীঠ মালাই চন্ডী নামে পরিচিত|

আরেকটি ভিন্ন মত অনুসারে এই প্রাচীন দেবী মন্দির ও তার পুজো কে কেন্দ্র করে এক কালে বিরাট মেলা বসতো এই অঞ্চলে এবং দেবী এখানে চন্ডী রূপে পূজিতা তাই বহু মানুষের মিলন স্থল এই চন্ডী মন্দির লোক মুখে হয়ে ওঠে মেলাইচন্ডীর মন্দির|

প্রচলিত গল্প অনুসারে, দামোদর দিয়ে যেসব সওদাগর যাতায়াত করতেন, তাঁরাই মেলাইচণ্ডীকে স্থাপন করেন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। পরে জটাধারী চক্রবর্তী নামের এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে জয়ন্তী গ্রাম থেকে প্রস্তররূপী দেবীকে আমতায় নিয়ে আসেন এবং দেবীকে স্থাপন করেন।

পরবর্তীতে কলকাতার হাটখোলার নামকরা লবন ব্যবসায়ী কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেলাইচণ্ডী মন্দির নির্মাণ করে দেন|বর্তমানে যে মন্দির দেখা যায় ১৩০৯ সালে সেই মন্দিরের সংস্কার হয়েছে নব রূপে,মূল মন্দিরের মাঝখানে চাতাল ও উঁচু বেদিযুক্ত দুর্গা মণ্ডপ। একটু ঢুকে উপাসনা গৃহ|এই মন্দিরে দেবীর সম্পূর্ণ রূপ নেই। মুখ মন্ডল মালাইচাকির ওপর ভিত্তি করে তৈরি|দেবীর বাহু ও পদযুগল নেই|মূলত একটি গোলাকৃতি প্রস্তর খণ্ড এখানে পূজিতা হয়|এছাড়া বিশেষ বিশেষ তিথিতে ঘট হিসেবে দেবীকে পুজোর রীতিও রয়েছে|

প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মালাই চন্ডীতে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয় এবং দুর্গোপুজার সময় এখানে মহোৎসব হয়। দেবী এখানে দুর্গা ও চণ্ডী উভয় রূপেই পুজিত হন। দেবীর সঙ্গে তার ভৈরবকেও পুজা করা হয় নিষ্ঠা সহকারে|পুজো উপলক্ষে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয় এই পবিত্র মন্দির প্রাঙ্গনে|

মা মালাই চন্ডী কে প্রনাম জানিয়ে আজকের লেখা শেষ করলাম|আপাতত চেম্বারের ব্যাস্ততা নেই, অনলাইনেই জ্যোতিষ পরামর্শ দেয়া চলছে,তাই যেটুকু অবসর পাওয়া যায় তা কাজে লাগিয়ে আবার কোনো নতুন পর্ব নিয়ে ফিরে আসবো আপনাদের সামনে|ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ধন্যবাদ|