বারুইপুর রাজ বাড়ির দূর্গা পুজো

96

বারুইপুর রাজ বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নবাবী আমলে বাংলার বারো ভুঁইয়া দের এক ভূঁইয়া ছিলেন বারুইপুরের রায়চৌধুরীরা যদিও তারা গোড়ার দিকে রায় ছিলেন পরবর্তীতে ব্রিটিশ দের দের সাথে সম্পর্ক এবং নিজেদের প্রভাব ও প্রতিপত্তির জোরে রায় চৌধুরী উপাধি লাভ করেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং বর্তমান দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা ছিলো তাদের জমিদারির অংশ।

 

তাদের সেই জমিদারীর স্বর্ণ যুগ আজ আর হয়তো নেই তবে তাদের দুর্গাপূজা আজও আছে। বারুইপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো নানা কারণে ঐতিহাসিক। এই পূজোর ইতিহাস নিয়ে এই পর্বে আলোচনা করবো।

 

প্রায় তিনশো বছর আগে রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। এখনও তিন জন পুরোহিত রীতি মেনে এখানে পুজো করেন।প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো।

সেই শুরুর দিন থেকে যা যা রীতি আছে সবই আজও নিষ্ঠার সাথে পালিত হয় এখানে।

 

বেশ কিছু বছর আগেও বারুইপুর আদি গঙ্গার জলে প্রতিমার বিসর্জনের সময় দুটি করে নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতেন বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির কর্তারা। যদিও সরকারী কারণে নীল কণ্ঠ পাখি ওড়ানোর মতো কিছু রীতিতে বর্তমানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাগাম টানতে হয়েছে তবুও বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে চলে আসা ঐতিহ্য যতটা সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।

 

যেহেতু পুজো হয় তন্ত্র মতে তাই সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে পশু হয় বলি হয়। অষ্টমীতে পরিবারের সবার একসাথে বসে ভোগ খাওয়ার নিয়ম আছে।অতীতে জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে প্রজারা আসতেন এখন সেই পরম্পরা আর চোখে পড়েনা তবে জেলা থেকে বহু দর্শণার্থী আজও আসেন।

 

চারপাশের অসংখ্য বারোয়ারী পুজোর ভিড়, থিমের চমক থাকলেও আজও অমলিন বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো এবং তাদের গৌরব।আজও তাই রীতি মেনে

বারুইপুরে প্রতি বছরই রায়চৌধুরীদের প্রতিমা সবার আগে বিসর্জন হয়। তারপর অন্যান্য প্রতিমা বিসর্জিত হয়।

 

ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট থাকা কালীন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও একসময় কিছুদিন বারুইপুরের এই জমিদার বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। এই বাড়িতে বসেই তিনি কপাল কুণ্ডলা এবং দূর্গেশনন্দিনীর মতো ঐতিহাসিক উপন্যাস

গুলি লিখেছেন। তার ব্যাবহিত টেবিল এবং

চেয়ার এখানে এখনও রাখা আছে।

 

প্রভু জগন্নাথেদেবের রথ যাত্রা এবং দূর্গা পুজো দুটোই এই পরিবারের বেশ জাঁকজমক করে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে যা গোটা জেলার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং সমাদৃত।

 

সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন সব ঐতিহাসিক দূর্গা পূজো নিয়ে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে।ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।