জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের ভোগ
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
জগন্নাথদেব ভোজন রসিক সব পুরীধাম ভোগের জন্য বিখ্যাত।পুরীর মন্দিরে জগন্নাথের ভোগ নিবেদন নিয়ে আছে অনেক পৌরাণিক ঘটনা অনেক ইতিহাস এই মন্দিরে ভোগ রান্না থেকে ভোগ নিবেদন সবেতেই আছে অভিনবত্ত্ব। সেই সব নিয়েই আজকের পর্ব।
শাস্ত্রে আছে ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।ভগবানের ভোজনের স্থান রূপে পুরীর ভোগের কিছু বিশেষত্ব থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
পুরীতে জগন্নাথকে অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ।
যশোদা মা বালক শ্রী কৃষ্ণকে ছাপান্ন ভোগ অর্পণ করেছিলেন। শ্রী কৃষ্ণই কলি যুগে জগন্নাথ রূপে বিরাজমান তাই জগন্নাথদেবকেও ছাপান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়।
সারাদিনের ভোগে থাকে নানা বৈচিত্র।জগন্নাথ খিচুড়ি খেতে ভালো বাসেন তাই তার জন্য বিশেষ খিচুড়ি তৈরী হয় এছাড়া জগন্নাথদেবকে দেওয়া হয় খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা। এরপর দেওয়া হয় রাজা ভোগ। এই তালিকায় থাকে মিষ্টি চালের খিচুড়ি, ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি। দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। সেখানে থাকে ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। এছাড়াও থাকে ক্ষীর ও মালপোয়া। সন্ধেবেলায় দেওয়া হয় লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাত। সঙ্গে খাজা, গজা এবং নানা ধরনের মিষ্টি। শয়নের আগে দেয়া হয় ডাবের জল। ছাপ্পান্ন ভোগের মধ্যে থাকে নানা রকম মিষ্টি। নানা রকম ভাত এবং পীঠে পুলী।
জগন্নাথ মন্দিরের একাংশেই হয়েছে বড় রান্নাঘর। সেখানে রয়েছে ৭৫২ টি উনুন, সেখানে এই ভোগ রান্নার কাজ করেন ৩০০-রও বেশি রাঁধুনি। এরাই বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে ভোগ রান্না করেন।
রান্নার প্রক্রিয়াও বেশ মজার। মন্দিরের রান্নাঘরে একটি পাত্রের উপর আর একটি পাত্র এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচে তারপরে রান্না হয় তাছাড়া পুরী মন্দিরের প্রতিদিন সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমাণ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ মানুষ সকলেরই পেট ভরে যায়।প্রসাদ কখনও কম পড়ে না বা নষ্ট হয় না।
পুরীর মন্দিরে ভোগ গ্রহণ অত্যান্ত সৌভাগ্যর বিষয় এতে প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদ লাভ হয়।
চলতে স্নান যাত্রা রথযাত্রা উপলক্ষে
জগন্নাথদেব প্রসঙ্গে আলোচনা।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।