ভক্তের ভগবান – রামভক্ত বিভীষণ

20

ভক্তের ভগবান – রামভক্ত বিভীষণ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ভক্তির জন্য সংসার ত্যাগ বা প্রাণ ত্যাগ সনাতন ধর্মে নতুন কিছু না তবে ভক্তির জন্য নিজ কুল নিজ ভ্রাতা এবং পরিবারের সাথে চরম শত্রুতা করে ভগবানের সাথে হাত মেলাতে একমাত্র বিভীষণই পেরে ছিলেন। আজ এই পরম রাম ভক্তকে নিয়ে লিখবো।

রামায়ণ অনুসারে বিভীষণ ছিলেন রাবণের ছোট ভাই। অত্যাচারী রাবণ যখন ছল করে সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় আনলেন এবং রাম যখন রাবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন তখন বিভীষণ
তার ভাই তার পরিবার এবং সমগ্র লংকার বিরুদ্ধে গিয়ে তার আরাধ্য শ্রী রামের পক্ষ নেন।কারণ রাক্ষস কূলে জন্মালেও বিভীষণ ছিলেন শ্রী রামের পরম ভক্ত এবং ভগবানের পক্ষে দাঁড়াতে তিনি সর্বস্য ত্যাগ করেন।

প্রথমে তিনি বারবার সীতাকে ফিরিয়ে দিতে রাবনকে অনুরোধ করেছেন কিন্তু রাবণ তার কথা শোনেননি এবং শেষে নিজের রাজ্য নিজের প্রাণ দিয়ে মূল্য দিতে হয়েছিল।ধর্ম এবং অধর্মর যুদ্ধে রামের জয়লাভের পেছনে বিভীষণের যথেষ্ট অবদান ছিল।। রাম রাবণের যুদ্ধে রাবণে পরাজিত হলে বিভীষণ লঙ্কার রাজা উপাধি পান।কিন্তু বিভীষনের রাজ্য পরিচালনায় মন ছিলোনা। তিনি আজীবন প্রভু শ্রী রামের নাম জপ করে তার ধ্যান করেই কাটাতে চেয়ে ছিলেন।

এখানে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হয়। রাম এবং রাবনের যুদ্ধ বাঁধার বহু আগে থেকেই বিভীষণ শ্রী রামের ভক্ত ছিলেন। কথিত আছে তার প্রাসাদের সর্বত্র তিনি শ্রী রামের নাম লিখে রাখতেন। একদিন ভ্রাতা রাবন যখন গুপ্তচর মারফত জানতে পারলেন তার ভাই তার শত্রুর নাম তার প্রাসাদে লিখে রাখেন রাবন তাকে তীব্র ভৎসনা করলেন এবং এর কারন জানতে চাইলেন। চতুর বিভীষণ এর উত্তরে বলেন রা অর্থাৎ রাবন এবং ম অর্থাৎ মন্দদরি অর্থাৎ তিনি তার ভ্রাতা এবং মাতৃ স্বরূপা বৌদির নাম লিখেছেন। উত্তর শুনে রাবনের ক্রোধ শান্ত হয়।

ভক্তিতে যদি অটুট থাকা যায় একজন ভক্ত তার ভগবানের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে পারে সব এবং ত্যাগ করা সব কিছুই তার কাছে পুনরায় ফিরে আসে। বিভীষণ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

আবার ভক্ত এবং ভগবানের পরবর্তী পর্ব নিয়ে ফিরে আসবো থাকবে আরো অনেক পৌরাণিক ঘটনা এবং ভক্তের কথা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।