লক্ষী পুজোর বিধি নিষেধ 

16

লক্ষী পুজোর বিধি নিষেধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বিগত কয়েকদিন ধরে দেবী লক্ষী প্রসঙ্গে শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং ব্যাখ্যা করছি।আজকের পর্বে জানবো লক্ষী পুজো সংক্রান্ত কিছু বিধি নিষেধ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা|

 

দেবী দেবী লক্ষী অন্নদাত্রী এখানে অন্ন শুধু খাদ্য নয় সমৃদ্ধির প্রতীক। লক্ষী পুজোর দিন অন্ন বা যেকোনও খাবার নষ্ট করবেন না। এতে মা অসন্তুষ্ট হন। দেবী লক্ষ্মী অন্নের অপচয় সহ্য করেন না ফলে বাড়িতে অর্থ ও খাবারের অভাব দেখা দিতে পারে। এই দিনে সম্ভব হলে অন্ন দান করুন তাতে সমৃদ্ধি লাভ করবেন।

 

লক্ষ্মী দেবীকে সাদা রঙের ফুল দিয়ে পুজো না করে লাল, হলুদ, গোলাপি রঙের ফুল ব্যবহার করা যাবে। এই রঙগুলি দেবীর বেশি প্রিয়।লক্ষ্মীপুজো করার সময় কোনওভাবেই কালো পোশাক পরা যাবে না। কারন সাদা ও কালো রঙ দেবী পছন্দ করেননা তার প্ৰিয় রঙ হলুদ ও লাল|

মা লক্ষ্মীর পুজোয় সাদা ফুল যেমন ব্যবহার করা যায় না, তেমনই আসনে সাদা বা কালো কাপড় পাতার নিয়ম নেই। ব্যবহার করা যেতে পারে লাল, গোলাপি প্রভৃতি রঙের কাপড়।

 

মনে করা হয়, শ্রীলক্ষ্মীর পূজতে তুলসী ব্যবহার করলে দেবী অসন্তুষ্ট হন| এর ব্যাখ্যা হলো তুলসির সঙ্গে শালগ্রাম শিলার বিবাহ হয়। শালগ্রাম গ্রাম শিলা নারায়ণের প্রতিভূ। যেহেতু শ্রীলক্ষ্মীও বিষ্ণুপত্নী তাই দুজনের সম্পর্ক মধুর নয় তাই এই পুজোয় তুলসির ব্যবহার চলে না।

 

পুজোর পর মন্দির বা ঠাকুর ঘরের দক্ষিণমুখে প্রসাদ অর্পণ করার কথা বলে থাকেন অনেকে। এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা না থাকলেও বাস্তু শাস্ত্র মতে শুভ| লক্ষ্মীপুজোর প্রসাদে না বলতে নেই। অল্প হলেও মুখে তুলতে হয়।এতে দেবী প্রসন্ন হন|পুজোর প্রসাদ ফেরালে দেবী অসন্তুষ্ট হন।

 

ঢাক – ঢোল- কাঁসর ঘণ্টা লক্ষ্মীপুজোয় বাজানো যাবে না। অত্যধিক শব্দ পছন্দ করেন না শ্রীলক্ষ্মী। সব পুজোতেই বাদ্যি বাজানো হয়। কিন্তু মা লক্ষ্মীর পুজোয় কাঁসর ঘণ্টা বাজালে দেবীর অসন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়।এবিষয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে|

 

পুরাণ মতে ঘণ্টাকর্ণ নামে এক দেবতা দেবীকে দেবীকে অসম্মান করেছিলেন। যে দেবীকে গোটা দেবলোক পুজো করেন সেই দেবীকেই কিনা অপমান করেন ঘণ্টাকর্ণ। এই ঘটনায় দেবী লক্ষ্মী ঘণ্টাকর্ণের উপর বেজায় ক্রুদ্ধ হন।বলা হয় সেই থেকেই অন্যান্য সমস্ত পুজোতে ঘণ্টা বাজালেও, লক্ষ্মী পুজোতে ঘণ্টা বাজানো নিষিদ্ধ। সেই থেকেই মা লক্ষ্মীর পুজোয় কোন ব্যক্তি ঘন্টা বাজালে, তাঁর উপর বেজায় ক্ষিপ্ত হন পদ্মাসনা দেবী লক্ষ্মী। ঘন্টার বদলে শঙ্খ ব্যাবহার করুন। দেবী লক্ষী শঙ্খ পছন্দ করেন।

 

আপনাদর সবাইকে কোজাগরী লক্ষী পুজোর অনেক শুভেচ্ছা। আগামী পর্ব গুলিতে এমনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।