দেবী লক্ষীর বাহন

19

দেবী লক্ষীর বাহন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মে প্রত্যেক দেব দেবীর একটি নিদ্দিষ্ট বাহন আছে। যেমন শিবের নন্দী। বিষ্ণুর গড়ুর। সরস্বতীর রাজ হংস। বিশ্বকর্মার হাতি। তেমনই দেবী লক্ষীর বাহন পেঁচক বা প্যাঁচা। লক্ষী

পুজো উপলক্ষে এই বিশেষ পর্বে আজ আলোচনা করবো দেবী লক্ষীর বাহন প্যাঁচা নিয়ে। জানবো এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

দেবী লক্ষীর বাহন কেনো প্যাঁচা তার অনেক গুলি কারন ও ব্যাখ্যা আছে|

 

দেবী লক্ষী সমৃদ্ধির দেবী।বলা হয় ধান বাঙালির কাছে লক্ষী বা সমৃদ্ধির প্রতীক।কিন্তু এই ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকে নষ্ট করে খাদ্যশস্য তাই ধানের শত্রু ইঁদুর। আর ইঁদুরকে খায় পেঁচা অর্থাৎ ধানকে রক্ষা করে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই লক্ষ্মী দেবীর বাহন এই নিশাচর এবং মাংশাসি পাখি।

 

তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মী গুন অর্থাৎ সত্য প্রেম পবিত্রতা তপস্যা তিতিক্ষা পেতে চান তাকে পেচক ধর্ম পালন করতে হবে অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন সম্পদ রক্ষা

করতে হবে। পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয় অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে তাই অতি গোপনে পেচা বাস করে। সেরকমই সম্পূর্ণ জ্ঞান বা পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয় ব্যক্তির দৈব সম্পদ নষ্ট করে।এসব কারনে পেচাকে লক্ষীর বাহন হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে।কারন পেঁচা নিঃশব্দে এবং অন্ধকারে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যায়। সে অন্তর মুখী এবং একই সাথে শক্তিশালী।

 

ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, পেঁচা আসলে যমের দূত। যম অর্থ সংযম, যম মানে ধর্ম। ধনোপার্জনের ক্ষেত্রেও সংযমবুদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার প্রতীক পেঁচা। যমদূত পেচক তাঁর নিজের বৃত্তি ও প্রভুর ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে মৃত্যুচিন্তা ও আত্মচিন্তা জাগ্রত করে মানুষের মনে। তাই সে লক্ষীর বাহন হিসেবেও স্থান পেয়েছে।

 

আবার লৌকিক মতে কোজাগরীর রাতে মা লক্ষ্মী খোঁজ নেন কে জাগ্রত রয়েছে। জেগে থাকা ব্যক্তিকেই তিনি ধনের সন্ধান দেন। পেঁচা প্রতি রাতেই জেগে থাকে। দিনে ঘুমায় তাই প্যাঁচাকে দেবী নির্বাচন করেছেন তার বাহন রূপে|

 

আগামী পর্বে লক্ষী পুজো সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। জানাবো লক্ষী পুজোর কিছু শাস্ত্রীয় নিয়ম নীতি এবং তার ব্যাখ্যা।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।