সন্ধি পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

585

আপনারা নিশ্চই জানেন কুমারী পুজোর ন্যায় দূর্গাপুজোর অন্যতম অঙ্গ সন্ধি পুজো|শাস্ত্র মতে সন্ধি পুজোর আলাদা তাৎপর্য রয়েছে|আজকের পর্বে সন্ধি পুজো নিয়ে আলোচনা করবো|পড়তে থাকুন|দূর্গা পুজো প্রধানত তিনটি রীতিতে অনুষ্ঠিত হয় সাত্ত্বিক যেখানে, জপ, যজ্ঞ ও নিরামিষ ভোগ দ্বারা পূজা হয়|তামসিক, এতে জপ, যজ্ঞ ও মন্ত্র নেই। মদ, মাংস প্রভৃতি দ্বারা পূজা করা হয়|রাজসিক যাতে পশুবলি ও আমিষ ভোগ দ্বারা পূজা করা হয়|তিথি মেনে অষ্টমী তিথিতে হয় সন্ধি পুজো, সন্ধিপুজো আসলে অসুর নাশিনী দেবী দুর্গার আর এক অসুরদলনী রূপের পূজা। সেই দেবীর নাম ‘চামুণ্ডা’। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন। তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়।অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরুর প্রথম ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ। পুরাণ অনুসারে অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে দেবী অম্বিকার কপালে থাকা তৃতীয় নেত্র থেকে দেবী কালিকা প্রকট হয়েছিলেন ঠিক এই সময়কালেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে এমনটাও বলা হয়ে থাকে যে পরাক্রমী অসুর রক্তবীজের সমস্ত রক্ত এই সন্ধি মুহূর্তেই দেবী চামুণ্ডা কালিকা পান করেছিলেন। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায়, এই সন্ধিক্ষণ চলাকালীন সময়ে মা দুর্গার অন্তর থেকে সমস্ত স্নেহ, মমতা অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই কারণেই সন্ধি পূজার সময়ে দেবীর দৃষ্টি পথ পরিষ্কার রাখা হয়, চামুণ্ডা দুর্গার চোখের সামনে দাঁড়াতে নেই।সন্ধিপূজা তান্ত্রিক মতে হওয়ার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই সন্ধিপূজার সময় পশুবলি দেওয়ার প্রথা ছিল। পশুর মাংস, রক্ত ও সুরা উৎসর্গ করা হতো দেবী চামুণ্ডাকে। কিন্তু সেই প্রথা বর্তমানে অনেকটাই লুপ্ত হয়েএসেছে|সন্ধিপূজার সময় মায়ের পায়ে নিবেদিত হয় ১০৮ লাল পদ্ম। এই ১০৮ টি পদ্মের পিছনেও আছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। কৃত্তিবাসের রামায়ণ থেকে জানা যায় অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত।সেই ক্ষত মেরামতের উদ্দেশ্যেই ওই পদ্ম নিবেদন করা|ত্রেতা যুগে লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিনমাসে দুর্গাপূজার আয়োজন বা অকালবোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন।একটি পদ্ম কম পড়ায় নিজের একটি চোখ দিতে চেয়েছিলেন শেষে দেবী অবতীর্ন হয়ে তাকে বিরত করেন|আজও অনেক জায়গায় এই সন্ধিপূজার সময় বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। বর্তমানে কোথাও কোথাও এখনো পশু বলি হয়| আবার যেখানে তা হয় না সেখানে প্রথা মেনে কলা, আঁখ, চালকুমড়ো ইত্যাদিও বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোর এই বলি দান অষ্টমী তিথিতে হয় না, তা হয় সন্ধি পুজোর প্রথম দণ্ড অর্থাৎ ২৪ মিনিট পার হওয়ার পরেই।আধুনিক সময়ে দূর্গা পুজোতে অনেক বাহ্যিক পরিবর্তন আসলেও শাস্ত্র মেনে যেখানে পুজো হয়ে সেখানে সন্ধি পুজোর গুরুত্ব একই আছে|জানিয়ে রাখি আসন্ন মহালয়া অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজো হোম যজ্ঞ ও গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে|আপনারা চাইলে সেই অংশ নিতে পারেন|মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজোতেও সন্ধিপুজো শাস্ত্র মেনে পালন করা হয়ে থাকে|যুক্ত থাকুন মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজোর সাথে|আসন্ন দূর্গা পুজো উপলক্ষে আরো অনেক এমন বিশেষ পর্ব আপনাদের জন্য নিয়ে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|