পুরান কথা – গুন্ডিচা মন্দির

786

রথ যাত্রার সূচনা যেমন হয় স্নান যাত্রা দিয়ে তেমনই সমাপ্তি হয় উল্টো রথ দিয়ে আর এই উল্টো রথ প্রসঙ্গে বার বার আলোচিত হয় গুন্ডিচা ম্পন্দিরের কথা|উল্টো রথে নয় দিন পর গুন্ডিচা মন্দির থেকে নিজ মন্দিরে ফিরে আসেন জগন্নাথ দেব|গুন্ডিচা মন্দির ভ্রমণকেই আবার মাসির বাড়ি যাওয়া মনে করেন অনেকে। গুণ্ডিচা মন্দির জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি বা বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত। মন্দিরটি একটি স্বর্গীয় বাগানের মাঝে অবস্থিত। শ্রীজগন্নাথদেবের মূল মন্দির তথা “শ্রীমন্দির”-এর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচা মন্দির।বছরের অন্যান্য সময়ে মন্দিরটি প্রায় শূণ্য থাকে। রথযাত্রার ঠিক একদিন আগে থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার থাকার উপযুক্ত করে তোলার জন্য ধর্মীয়ভাবে গুণ্ডিচা মন্দির সংস্কার করা হয় এবং আষাঢ় মাসের রথযাত্রার সাতদিন যাবৎ এই গুণ্ডিচা মন্দিরেই জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা করা হয়।আসলে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রীছিলেন গুণ্ডিচা।রাণী গুণ্ডিচার নামেই সংশ্লিষ্ট মন্দিরটি নির্মিত যা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে একটি পৌরাণিক ঘটনা|দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা জগন্নাথ মূর্তি তৈরি করার সময় রাণী গুণ্ডিচা বন্ধ দরজার বাইরে থেকে নিষেধ অমান্য করে উঁকি মারেন এবং জগন্নাথের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে তার জন্য একটি পৃথক মন্দির তৈরী করবেন ঠিক করেন|পরবর্তীতে জগন্নাথদেব তার জন্য তৈরি মন্দির দেখে সন্তুষ্ট হন ও রানী গুন্ডিচার ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে রাণী গুণ্ডিচাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি তার বাড়ীতে আসবেন। যেটি বর্তমানে গুণ্ডিচা মন্দির নামে খ্যাত।গুন্ডিচা মন্দির ও জগন্নাথ দেবের সাতদিন এই মন্দিরে থাকা নিয়ে একটি শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে|অনেকে মনে করেন জগন্নাথ দেব গুণ্ডিচা মন্দিরে সাত দিন থাকার সময়ে তার স্ত্রী দেবী লক্ষ্মীকে মূল মন্দিরের সংগ্রহকক্ষে বন্দিনী করে রেখে আসেন এবং গুণ্ডিচা মন্দিরে তিনি তার প্রিয় গোপীগণের সাথে সময় অতিবাহিত করেন এটি বৃন্দাবনে কৃষ্ণের রাসলীলার মতো একটি বিশেষ লীলা|অন্য একটি ব্যাখ্যা অনুসারে “গুণ্ডিচা” ছিলেন স্থানীয় দেবী লৌকিক দেবী যিনি মা শীতলার ন্যায় গুটিবসন্ত রোগ নিরামক। ওড়িয়া ভাষাতে “গুণ্ডি” শব্দটির অর্থ গুটিবসন্ত, যা বাংলা “গুটি” শব্দটি থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। এবং বাংলার গুটিবসন্ত নিরাময়ের দেবী “গুটিকা ঠাকুরাণী” এবং ওড়িয়া “গুণ্ডিচা”কে একই ব্যাক্তিচৈতন্য মহাপ্রভু একবার রথযাত্রার আগের দিন গুণ্ডিচা মন্দির পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেন। এই রীতিটি বর্তমানেও রথযাত্রার আগের দিন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ পালন করে থাকেন।চলতে থাকবে পৌরাণিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ব্যাখ্যা|গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু ও তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ধন্যবাদ|