সংস্কৃতে লেখা এই প্রাচীন বৈদিক শ্লোক
আমরা অনেকেই হয়তো আগে শুনেছি
‘গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ’
কিন্ত ঠিক সেই ভাবে তলিয়ে খুঁজিনি এর অন্তর্নিহিত অর্থ, এই শ্লোকে বলা হচ্ছে জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশে প্রণাম জানাই|ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে এই গুরু শিষ্য পরম্পরা|আর এই পরম্পরা বা ঐতিহ্য কে উদযাপন করার দিন হচ্ছে গুরু পূর্ণিমা|আগামী 24 জুলাই এবছর গুরু পূর্ণিমা পালন হবে|আর এই বিশেষ সময়ে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমাদের হাজার হাজার বছরের এই গুরু শিষ্য ঐতিহ্যর নানা দিক, ব্যাখ্যা করছি গুরুতত্ব কে নিজের মতো করে আর লিখছি জগৎ বিখ্যাত কিছু গুরুর কথা|
এমনই এক পরম শ্রদ্ধেয় ও মহাজ্ঞানী গুরু ছিলেন ঠাকুর সীতারাম দাস ওঙ্কার নাথ দেব|আজ এই মহান গুরুর জীবন নিয়ে কিছু কথা বলবো|
1891 সালে হুগলীর ডুমুর দহে প্রান হরি চট্টোপাধ্যায় ও মালতি দেবীর গৃহে জন্মায় এক শিশু নাম রাখা হয় প্রবোধ চন্দ্র|শৈশব থেকেই কিছুটা ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন প্রবোধ চন্দ্র, ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন |পরবর্তীতে শিক্ষাগুরু ও সাধক দাশরথি মুখোপাধ্যায়ের কাছে দীক্ষা নিলেন|শিক্ষাগুরু হলেন দীক্ষাগুরু। প্রবোধচন্দ্রের নাম হলো ‘সীতারাম’|গঙ্গা যমুনা সঙ্গম এ রাম নাম মন্ত্রে তার দীক্ষা হয়েছিলো|আত্মীয় স্বজন রা তাকে গৃহী দেখতে চেয়েছিলো তাই ঠাকুরচরণ ভট্টাচার্য্যের কন্যা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ দিলেন|কিন্তু ক্রমে আধ্যাত্মিক ভক্তির সমুদ্রে ডুবে যেতে থাকেন সীতারাম দাস ওঙ্কার নাথ এবং দুই সন্তান এর জন্মের পর ঘর ছেড়ে সন্যাসী হয়ে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি|সর্বত্র রাম নাম প্রচার করতেন তিনি|
ক্রমেই এক দিব্য ও অলৌকিক শক্তি উৎপন্ন হয় তার মধ্যে|সারা ভারত পরিক্রমা করে ১৯৩৬ সালের পৌষ মাসে সীতারাম ফিরে এলেন তাঁর দীক্ষালাভের স্থান ত্রিবেণীতে এবং স্থাপন করলেন একটি মঙ্গলঘট|এরপর বস্ত্র ত্যাগ করে কৌপিন পরিহিত সন্ন্যাসী রূপে পদার্পন করেন নিজের জন্ম স্থানে|ততো দিনে তিনি এক আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন মহাপুরুষ|রাম নামের প্রচারে সপেঁ দিয়েছেন জীবন|অসংখ্য ভক্ত শিষ্য তার অনুগামী|লিখেছেন ১৫০ টি গ্রন্থ ও প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ভাষার ১৩ টি পত্রপত্রিকা|
তিনি ছিলেন এক প্রকৃত সাধক ও আদর্শ গুরু যিনি তার ভক্ত ও শিষ্য দের আধ্যাত্মিক পথে চলতে শিখিয়েছেন,ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করতে ও দেশকে ভালো বাসতে শিখিয়েছেন|১৯৮২ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন|দেশ ও সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার অগণিত ভক্ত শিষ্য আজও তার আদৰ্শ কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে|গুরু পূর্ণিমার এই বিশেষ সময় এই গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা আমার অন্তরের শ্রদ্ধা রইলো|প্রনাম জানাই এই মহান সাধক কে|
আশা করি এই বিশেষ পর্ব গুলি আপনাদের ভালো লাগবে, আপনাদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই জানাবেন|যোগাযোগ করবেন ইচ্ছে হলে|আগামী পর্বে নিয়ে আসবো গুরুতত্ত্ব ও গুরু পূর্ণিমা সম্পর্কে আরো কিছু না বলা কথা এবং সাথে থাকবে আরেক মহান গুরুর জীবন কাহিনী|পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন|আর এই পুন্য তিথি তে জ্যোতিষ বা তন্ত্র সংক্রান্ত কোনো কার্য সম্পন্ন করানোর থাকলে উল্লেখিত নম্বরে যোগাযোগ করবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| See less