বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর ইতিহাস

166

আসন্ন অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষে দেবী অন্নপূর্ণার পুজোর মাহাত্ম ও তার ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি। আজ বঙ্গ দেশে দেবী পুজোর ইতিহাস নিয়ে বলবো।দেবী অন্নদার কৃপা প্রাপ্ত হয়ে ভবানন্দ মজুমদার জাহাঙ্গীরের কাছে রাজা উপাধি লাভ করেছিলেন।দেবী অন্নপূর্ণার পুজো বঙ্গদেশে প্রচলন করেছিলেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগরের জমিদার এবং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পূর্বসুরী। তাকেইবাংলার অন্নপূর্ণা পুজোর সূচনা করার কৃতিত্বদেয়া হয়।তবে বহু আগেথেকেই বিভিন্ন শাস্ত্রে বঙ্গদেশে দেবী অন্নপূর্ণার পুজোর উল্লেখ আছে।অন্নদামঙ্গলকাব্যে দেবী পুজোর বিষয়ে অনেককিছুই লেখা আছে।শোনাযায় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের কাছে নির্ধারিত দিনে কর বা রাজস্ব মেটাতে না পেরে দুর্গাপুজোর সময় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মুর্শিদাবাদে কারারুদ্ধ হন। সেই সময়ে দেবী অন্নপূর্ণা রাজাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে অন্নপূর্ণা পুজোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্র মুক্তি পেয়ে সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ছিলেন।আবার অনেকে মনে করেন এই পুজো এসেছিল কাশী থেকে কারন বাংলার সঙ্গে কাশীর যোগ বহুকালের এবং কাশী হল মা অন্নপূর্ণার প্রধান অধিষ্ঠানক্ষেত্র।বাংলায় দেবী অন্নপূর্ণার একটি মন্দির রয়েছে বেহালার বড়িশায়। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের এক নিঃসন্তান সদস্য তার স্ত্রীর কাসিবাস আটকাতে নিজের জমিদারিতেই তৈরী করে দেন অন্নপূর্ণার মন্দির যা আজও স্বমহিমায় বিরাজমান।পরবর্তীতে বাংলার প্রখ্যাত সব রাজ পরিবার ও জমিদারদের তৈরী হয় বেশ কিছু অন্নপূর্ণা মন্দির।যেমন ব্যারাকপুরে একটি অন্নপূর্ণা মন্দির আছে যা দেখতে অনেকটা দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের মতো। যখন রানি রাসমণি তাঁর জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য দাসদাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাশীযাত্রা করেছিলেন তখন রাতে রানীমা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান যে তিনি যেনো কাশী না গিয়ে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করেন। এর পরে রানি কাশীযাত্রা স্থগিত করে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।পরবর্তীতে ব্যারাকপুরে রানী রাসমণির পরিবারের উদ্যোগে তৈরী হয় এই অন্নপূর্ণা মন্দির যেখানে আজও নিষ্ঠা সহকারে দেবী পূজিতা হয়ে আসছেন।ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায় বাংলার অন্নপূর্ণা পুজো পরবর্তীতে রাজা বা জমিদার বাড়ির অন্দর মহল ছাড়িয়ে সাধারন গৃহস্ত বাড়িতেও শুরু হয় দেবী আরাধনা।দেবী অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত আরো অনেক শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।