শক্তি পীঠ – বৈদ্যনাথ  

26

শক্তি পীঠ – বৈদ্যনাথ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে এমন একটি শক্তিপীঠ নিয়ে লিখবো যা একইসাথে একান্ন পীঠের অন্যতম পীঠ আবার দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত।বৈদ্যনাথ ধাম নিয়ে আলোচনা করবো। বৈদ্যনাথ ধাম নামেই বেশি পরিচিত এই শক্তিপীঠ। মন্দিরটি বর্তমানে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘর জেলায় অবস্থিত।

 

পুরানে আছে একবার রাবন শিবকে স্থায়ী ভাবে লঙ্কায় নিয়ে যেতে কঠোর তপস্যা করেন।তপস্যয় সন্তুষ্ট হয়ে চন্দ্রহাস নামে একটি বিরাট শক্তিশালী অস্ত্রও রাবণকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন এবং আত্মলিঙ্গ অর্পণ করে লঙ্কার প্রতিষ্ঠা করতে বলেন তাকে।শর্ত ছিলো কৈলাস থেকে লঙ্কার পথে যাওয়ার সময় কোথাও যদি রাবণ শিবলিঙ্গ কে কোন জায়গায় রেখে দেন, তাহলে তিনি সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে লঙ্কায় যাওয়ার পথে ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্থ রাবন এই স্থানে শিবলিঙ্গ কিছুক্ষনের জন্য নামিয়ে রাখেন আর সেখানেই শিবলিটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেই শিব লিঙ্গই বৈদ্য নাথ রূপের এই শক্তি পীঠের ভৈরব রূপে বিরাজ করছে।

 

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর হৃদয় বা হৃৎপিণ্ড পড়েছিল। বৈদ্যনাথ ধামে অধিষ্ঠিত দেবী জয় দুর্গা ও ভৈরব হলেন স্বয়ং শিব যিনি বৈদ্যনাথ রূপে এখানে বিরাজমান।

এটিই একমাত্র শক্তিপীঠ যেখানে বৈদ্যনাথে শিব এবং শক্তি একসাথে বিরাজমান।

 

প্রাচীন কালে মন্দিরের কিছু দূরে শ্মশান ছিল, যেখানে মায়ের হৃদয় পড়েছে বলে মনে করা হয়, এই জায়গাটি বর্তমানে “চিতাভূমি” নামে পরিচিত সকলের কাছে। মায়ের হৃদয় পতিত হওয়ার এই শক্তিপীঠ “হৃদয় পিঠ” নামেও ডাকা হয়।

 

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এই বৈদ্যনাথ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন এবং দেওঘর রাজ্যের রাজা দ্বিধাউর এই মন্দির নির্মাণের কাজে অনেকখানি সহযোগিতা করেছিলেন। পরবর্তী কালে এই মন্দির একাধিক বার সংস্কার করা হয় এমনকি ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও এই মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষনের ভার নিয়ে ছিলো।

 

শক্তি পীঠ হওয়ায় অমাবস্যা তিথি গুলিতে এখানে ধুমধাম করে পুজো হয় আবার জ্যোতির্লিঙ্গ থাকায় বৈদ্যনাথে বিরাট আকারে পালিত হয় মহা শিবরাত্রি।

 

আজকের শক্তিপীঠ পর্ব এখানেই শেষ করছি।

দেখা হবে পরের পর্বে থাকবে পরবর্তী শক্তি পীঠ নিয়ে উপস্থাপনা । পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।