দেবী লক্ষীর বাহন এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

26

দেবী লক্ষীর বাহন এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবী দুর্গা কইলাশে ফিরে যাওয়ার পরেই আবার ফিরে আসেন তার কন্যা লক্ষী। অনেকে মজা করে বলেন ব্যয়বহুল দুর্গাপুজোর পর বাঙালির অর্থ ভাণ্ডারে যখন টান পরে তখন ধন সম্পদের দেবী লক্ষী আসেন অর্থ এবং সম্পদ দান করতে। তবে তিনি একা আসেন না। সঙ্গে আসেন তার বাহন প্যাঁচা।কিন্তু এতো প্রাণী থাকতে কেনো দেবী লক্ষীর বাহন প্যাঁচা? তার অনেক গুলি কারন ও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে।আজ সেই নিয়ে লিখবো।

 

একটি সাধারণ ব্যাখ্যা মতে বলা হয় ধান বাঙালির কাছে লক্ষী কিন্তু এই ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকে নষ্ট করে খাদ্যশস্য তাই ধানের শত্রু ইঁদুর। আর ইঁদুরকে খায় পেঁচা অর্থাৎ ধানকে রক্ষা করে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই লক্ষ্মী দেবীর বাহন এই রাত জাগা পাখি।

 

তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মী গুন অর্থাৎ সত্য প্রেম পবিত্রতা তপস্যা তিতিক্ষা পেতে চান তাকে পেচক ধর্ম পালন করতে হবে অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন সম্পদ রক্ষা করতে হয়। পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয় অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে তাই অতি গোপনে পেচা বাস করে। সেরকমই পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয় ব্যক্তির দৈব সম্পদ নষ্ট করে।এসব কারনে পেচাকে লক্ষীর বাহন হিসেবে রেখে দিয়েছেন কারন পেঁচা নিঃশব্দে, অন্ধকারে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যায় এবং প্রচারের আড়ালে থাকে।

 

শাস্ত্রে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে।ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, পেঁচা আসলে যমের দূত। যম মানে সংযম, যম মানে ধর্ম। ধনোপার্জনের ক্ষেত্রেও সংযম,বুদ্ধি এবং ধর্মীয় চেতনা অপরিহার্য এই গুনগুলির প্রতীক পেঁচা। যমদূত পেচক তাঁর নিজের বৃত্তি ও প্রভুর ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে মৃত্যুচিন্তা ও আত্মচিন্তা জাগ্রত করে মানুষের মনে তাই সে লক্ষীর বাহন হিসেবেও স্থান পেয়েছে।

 

আবার লৌকিক মতে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে মা লক্ষ্মী খোঁজ নেন কে জাগ্রত রয়েছে। জেগে থাকা ব্যক্তিকেই তিনি ধন সম্পদ দেন।পেঁচা নিশাচর, প্রতি রাতেই জেগে থাকে। দিনে ঘুমায় তাই প্যাঁচাকে দেবী নির্বাচন করেছেন তার বাহন রূপে|

 

আগামী পর্ব গুলিতে লক্ষী পুজো সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।