বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
পন্ডিত ভৃগুশ্রী জাতক
আজ বিজয়া দশমী। আজ সব বাঙালির মন খারাপ করা একটা দিন কারন মা দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাশে। তবে শাস্ত্র মতে দিনটি গৌরবের। আজ আসুন জেনে নিই এই বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃ গৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী|তাই দশমী শব্দটি ব্যবহিত হয়। আবার পুরান অনুসারে নয় দিন ও নয় রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে দেবী মহিষাসুরকে বধ করে বিজয় লাভ করেন|অর্থাৎ বিজয়া রূপে আত্মপ্রকাশ করেন|তাই এই দিন টি বিজয়া দশমী রূপে চিহ্নিত হয়|
আগে রাজা জমিদার রা তাদের বাড়ির পুজোতে দশমীর দিন নীল কণ্ঠ পাখি ওড়াতো কারন
রামায়ণ অনুসারে রাবণকে বধ করার সময়
রাম নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই এই পাখিকে শুভ শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হয়ে থাকে। দশমীর দিন যদি নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে পাপ মুক্তি ঘটে এবং মনের সমস্ত সাধ পূরণ হয় বলে বিশ্বাস।
আবার পুরান অনুসারে সমুদ্র মন্থন করা হয়, তখন দেবাদিদেব সেই বিষ পান করেন এবং তাঁর কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যান। তাই তাঁকে নীলকন্ঠ বলা হয়ে থাকে। আর এই নীলকন্ঠ পাখিকে তাঁরই প্রতিরূপ মনে করা হয়। গ্রাম বাংলার লৌকিক রীতি অনুযায়ী বিজয়ার দিন দেবীর নিরঞ্জনের আগে যদি নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় তাহলে সেই পাখি কৈলাশে গিয়ে মহাদেবকে খবর দেবে যে তাঁর ঘরণী ফিরছে।
আবার উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়|’দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘দশহর’ থেকে এবং এখানে মূলত রাম কতৃক দশানন রাবন বোধের দিনটিকে উদযাপন করা হয়|বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন।
অর্থাৎ এই দিনর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক মাহাত্ম অপরিসীম। এটি শুভ শক্তির বিজয়ের দিন
তাই হয় তো স্নেহের আলিঙ্গন এবং মিষ্টি বিতরণের প্রচলন|তবু মন খারাপ থাকতেই পারে কারন নয় দিন ব্যাপী উৎসবের আজ সমাপ্তি|
সবাইকে জানাই শুভ বিজয়া।আধ্যাত্মিক, পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় নানা বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক লেখা চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।