পুরানের দেব দেবী – মা মনসা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দেবী মনসা একদিকে যেমন লৌকিক দেবী অন্যদিকে পুরানে এমনকি মহাভারতেও তার উল্লেখ রয়েছে|মনসার স্বরূপ ও তার উৎপত্তি এবং পরিচয় নিয়ে একাধিক শাস্ত্রে কিছু পরস্পর বিরোধী তত্ব উপস্থিত রয়েছে|আজকের পর্ব দেবী মনসা কে নিয়ে।
মা মনসা হিন্দুধর্মের লৌকিক সর্পদেবী। মধ্যযুগের লোককাহিনী বিষয়ক মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র। সর্পদেবী হিসেবে মনসার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অথর্ববেদে। পুরাণে তাঁকে ঋষি কাশ্যপ ও নাগ-জননী কদ্রুর কন্যা বলা হয়েছে।পুরান অনুসারে শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিতা হন।
মনসা মঙ্গলকাব্যে তাঁকে শিবের কন্যা বলা হলেও, পুরাণ অনুসারে তিনি ঋষি কশ্যপের কন্যা।পুরা কালে সর্প ও সরীসৃপগণ পৃথিবীতে কলহ শুরু করলে কশ্যপ তাঁর মন থেকে মনসার জন্ম দেন। ব্রহ্মা তাঁকে সর্প ও সরীসৃপদের দেবী করে দেন। মনসা মন্ত্রবলে বিশ্বের উপর নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। শিব তাঁকে কৃষ্ণ-আরাধনার উপদেশ দেন। মনসা কৃষ্ণের আরাধনা করলে কৃষ্ণ তুষ্ট হয়ে তাঁকে সিদ্ধি প্রদান করেন এবং প্রথামতে তাঁর পূজা করে মর্ত্যলোকে তাঁর দেবীত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
মহাভারতে মনসার বিবাহের উল্লেখ রয়েছে। ঋষি জগৎকারু এক প্রচণ্ড তপস্যায় রত ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে বিবাহ করবেন না। একদা তিনি দেখতে পান যে একদল লোককে গাছে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এঁরা ছিলেন তাঁরই পূর্বপুরুষ। তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ না করায় তাঁদের এই দুঃখজনক অবস্থা হয়েছিল। তাঁরা জগৎকারুকে বিবাহ করার উপদেশ দিয়ে বলেন যে তাঁর পুত্রই শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ করে তাঁদের দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে পারবে। বাসুকী জগৎকারুর সঙ্গে নিজ ভগিনী মনসার বিবাহ দেন। আস্তিক নামে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। আস্তিক তাঁর পূর্বপুরুষদের মুক্তি দেন। রাজা জনমেজয় সর্পজাতির বিনাশার্থে সর্পনিধন যজ্ঞ শুরু করলে আস্তিকই নাগদের রক্ষা করেন।
আবার মনসাবিজয় কাব্য থেকে জানা যায়, বাসুকীর মা একটি ছোটো মেয়ের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। শিবের শিবের ক্রিপায় এই মূর্তি থেকেই মনসার জন্ম হয় এবং পরবর্তীতে বাসুকী তাঁকে নিজ ভগিনীরূপে গ্রহণ করেন। বাসুকী তার কাছে গচ্ছিত বিষের ভান্ডার মনসাকে দেন যা পরবর্তীতে মনসার শক্তির উৎস হয়ে ওঠে|
পুরান উৎস হলেও গ্রাম বাংলায় মানুষ সাপের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে মনসা পুজো শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মনসা হয়ে ওঠেন লৌকিক দেবী।
আবার পরের পর্বে অন্য এক পৌরাণিক দেবতার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।