আজ যে শক্তিপীঠ নিয়ে লিখবো তা আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ভবানীপুরে অবস্থিত।এই শক্তি পীঠে দেবীকে অপর্ণা নামে ডাকা হয় আবার কারুর কারুর কাছে তিনি দেবী ভবানী। শক্তি পীঠ সংক্রান্ত প্রায় সব গুলি প্রামান্য গ্রন্থেই এই শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে।
দেবীর শ্রী অঙ্গের কোন অংশ এখানে পতিত হয়ে ছিলো তা নিয়ে সামান্য বিতর্ক আছে কিছু শাস্ত্রে আছে দেবী সতীর ডান চোখ পড়েছিল এই স্থানে।
তবে পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে এখানে দেবীর কর্ণ পড়েছিল। ভরত চন্দ্রের মতে এই স্থানে পড়েছিল দেবীর গোড়ালি।দেবীর ভৈরবের নাম বামন।
সুলতানি আমলে এই অঞ্চল শাসন করতেন সেনাপতি রহমত খাঁ।গৌরের শাসক যখন এই স্থান নিজের দখলে নিতে আক্রমণ করেন তখন পালতে গিয়ে রহমত খাঁর নৌকো আটকে যায় নদীর চড়ায়।তারপর দেবী অপর্ণার মন্দিরের পুরোহিতের নির্দেশে বিশেষ পুজো পাঠ হলে হটাৎ নেমে আসে ঝড় বৃষ্টি। নদীতে গিয়ে পড়ে নৌকা। রেহাই পেয়ে পরবর্তীতে সেনাপতি রহমত খাঁ দেবীর মন্দির নতুন করে সংস্কার করান। এসব ঘটনা আজও জনশ্রুতি আকারে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।
পরবর্তীতে এই স্থান নাটোরের রানী এই অঞ্চলের শাসক হন এবং রানী ভবানী এই মন্দিরের জন্য অনেক ভূ-সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন।
এই শক্তি পীঠকে কেন্দ্র করে আরো একটি অলৌকিক ঘটনার কথা শোনা যায়।নিজের মন্দিরটি থেকে বেরিয়ে দেবী অপর্ণা বা ভবানী প্রতিদিন দুপুরবেলা মন্দিরের উত্তর পারে সংলগ্ন জঙ্গলঘেরা পুকুরের পাশে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে বালিকা বধূ সাজে ধুলোমাটি নিয়ে খেলা করতেন। ভবানীপুরের এই মন্দিরের একদা জঙ্গলঘেরা এই পথ দিয়ে এক শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। দেবী ছল করে বালিকা বেশে সেই শাঁখারির থেকে শাঁখা পড়েছিলেন। সব শুনে মহারানী লোকজন নিয়ে সেই জায়গায় গিয়েছিলেন। মা ভবানী তখন পার্শবর্তী একটি পুকুর থেকে তার দুই হাতের শাঁখা উপরে তুলে দেখিয়ে ছিলেন।বহুকাল অবধি সেই
শাঁখারির পরিবার দেবীর উদ্দেশ্যে শাঁখা
অর্পণ করতো।
সব মিলিয়ে এই শক্তিপীঠের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব এবং দেবীর মহাত্ম অবর্ণনীয়। আজও এখানে
বহু ভক্ত আসেন নিজের মনোস্কামনা নিয়ে। শোনা যায় দেবী কাউকে খালি হাতে ফেরান না। প্রায় প্রতিটি বিশেষ তিথিতেই দেবীর বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
ফিরে আসবো অন্য একটি শক্তি পীঠের কথা নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।